প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৩ ১৮:৩৫ পিএম
আপডেট : ১৯ মে ২০২৩ ১৮:৩৮ পিএম
ফুটবল শুধু নিছক একটি খেলা নয়, ব্রাজিলিয়ানদের কাছে এটি একটি ধর্মও; যার পরশে বদলে গেছে হাজারো জীবন। গোটা দেশ পরিচিতি পেয়েছে ফুটবলে। রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী দেশও তারাই। দেশটির অসংখ্য ফুটবলার ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের বহু প্রান্তের শত শত ক্লাবে। এ ছাড়া বিশ্বের নানা প্রান্তের তরুণ ফুটবলাররা উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ভিড় জমান ব্রাজিলের ক্লাবগুলোতে। যেখান থেকে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশটির অর্থনীতির চাকা। এসব তো গেল সামনের দৃশ্য। পর্দার আড়ালেও যে ভিন্ন এক গল্প আছে। আলোয় উজ্জ্বল ব্রাজিল ফুটবলের ভেতরে যে নিয়মিতই ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো কেলেঙ্কারি ঘটে চলেছে, সেটিই এবার সামনে এনেছে ব্রাজিল কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ।
আরও পড়ুন - এক দিন নয়, তাদের চাওয়া সারা বছরের ক্রিকেট
গত নভেম্বরে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে তিনটি ম্যাচের ওপর দৃষ্টি দেয় ৩৪ জন আইনপ্রণেতার একটি দল, যা চলার কথা ছিল ১২০ দিন। তবে পরবর্তীতে তিনটি ম্যাচে দৃষ্টি দিয়ে রীতিমতো কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ খুঁজে পান তারা। একের পর এক ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ পান। যার মধ্যে ১১টি ম্যাচে ফিক্সিংয়ে বেশ কিছু প্রমাণও মিলেছে। গোয়াসে অ্যাটর্নি অফিসের প্রথম তদন্তে দেখা গেছে নির্দিষ্ট কাজের জন্য যেমন হলুদ কার্ড ও পেনাল্টির জন্য খেলোয়াড়দের ১০ থেকে ২০ হাজার ডলার প্রস্তাব করা হয়েছে। যাতে লাভবান হতেন বেটিং সাইট পরিচালনাকারীরা। এসব নিয়ে কংগ্রেসম্যান ফেলিপ ক্যারেরাস বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হলো ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের এই অপরাধগুলো দূর করা, যা লাখ লাখ ভক্তের আবেগকে আঘাত করেছে। এটা ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি। আমাদের ফুটবলের বিশ্বাসযোগ্যতা হুমকির মুখে। আমরা জানি না প্রদত্ত হলুদ কার্ড, লাল কার্ড বা পেনাল্টি হওয়ার কথা ছিল কি না।’
তদন্তে আরও জানা গেছে, ফুটবলারদের কেউ যদি টাকা নিয়ে সেই কাজ করতে ব্যর্থ হতেন, তাহলে সেই ফুটবলারকে খুনের হুমকি দেওয়া হতো। আর এসব কাজের জন্য গ্রিস, লিথুয়ানিয়ার মতো দেশ থেকে জুয়াড়িরা ফুটবলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।
ব্রাজিল ফুটবল সংস্থা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের দেশের কয়েকজন ফুটবলারের বিরুদ্ধে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ উঠেছে। মেজর সকার লিগ, সিরি এ, সিরি বি-র মতো প্রতিযোগিতায় খেলেন তারা। ফুটবল সংস্থার তরফে সরকারের কাছে তদন্তের আবেদন করা হয়েছিল। সেই তদন্ত শুরু হয়েছে। যারা দোষী প্রমাণিত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ব্রাজিলের ফুটবল সংস্থা। আর এই তদন্ত যে বেশ প্রভাব ফেলবে ব্রাজিল ফুটবলে, সেটি নিয়ে কথা বলেন প্রাক্তন ফ্ল্যামেঙ্গো চেয়ারম্যান ও আইনপ্রণেতা এডুয়ার্ডো ব্যান্ডেইরা ডি মেলো। তার মতে, ‘এটি ফুটবলারদের ওপর নীতিগত প্রভাব ফেলবে। কোনো তরুণ অ্যাথলেট এই জাতীয় পরিকল্পনায় যাওয়ার চেষ্টা করার আগে এরপর থেকে অন্তত দুবার ভাববে।’
ডি মেলোর সাবেক ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোর মিডফিল্ডার ম্যাক্স আলভেসের বিরুদ্ধেও ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। তবে ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তাকে বরখাস্ত করে ক্লাব। যদিও এর জন্য আজ অবধি প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি আলভেস। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই আলভেসকে বরখাস্ত করায় এর জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন ডি মেলো, ‘আমি এর জন্য খুবই দুঃখিত। ফ্ল্যামেঙ্গোর যুব বিভাগ থেকে আসা এই খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমাদের সব সময় খুব স্নেহপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আমি তখন যা করতে পারতাম তা হলো- আশা করা যে তার অংশগ্রহণ সবচেয়ে কম ছিল।’
ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ তদন্তের মধ্যেই সম্প্রতি ক্রীড়া বেটিং সংস্থাগুলোকে ট্যাক্সের আওতায় আনার জন্য নির্বাহী আদেশ প্রস্তুত করেছে ব্রাজিল সরকার। তবে বিষয়টি একেবারেই মেনে নেয়নি দেশটির ক্লাবগুলো। ইতোমধ্যেই এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা।