টেস্ট ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক। সেই আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সাফল্যের রাজমুকুটে যোগ হলো আরেকটি পালক। যে অর্জন নিয়ে গর্বিত হতে পারে বাংলাদেশও! নীরবে নিভৃতে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়! আইসিসি ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের অধীনে করেছেন মাস্টার এডুকেটর কোচ লেভেল টু। বুলবুল এখন কোচদেরও কোচ। একটু ভুল বলা হলো, তার চেয়েও উঁচুতে বাংলাদেশের এই সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার।
আরও পড়ুন : লিগ শিরোপা সিটির হাতে তুলে দিয়েছে আর্সেনাল
আইসিসির ট্রেনিং এডুকেশনের কাঠামোতে চোখ রাখলেই স্পষ্ট হবে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের এই অর্জন কতটা বিশাল। মাস্টার এডুকেটর এই কাঠামোর শীর্ষ জায়গা। এই মাস্টার এডুকেটররা তৈরি করেন আইসিসি টিউটরদের। এই ধাপের প্রশিক্ষকরা প্রশিক্ষণ দেন কোচদের। আর কোচের ভূমিকা তো সবারই জানা- তাদেরই হাত ধরে গড়ে ওঠেন ক্রিকেটাররা!
আইসিসির মাস্টার এডুকেটর বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান
এই অর্জনের পরও মাটিতেই পা থাকছে বুলবুলের। গতকাল প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উদ্যমী সেই কণ্ঠটাই শোনা গেল। দুবাই থেকে বুলবুল বলছিলেন, ‘গোটা বিশ্বে মাস্টার এডুকেটর লেভেল ওয়ান আছেন ১৬ জন; যারা কোচ তৈরি করবেন তাদের বলা হয় টিউটর। আমরা ওই টিউটর তৈরি করব। প্রথমে প্লেয়ার, তারপর কোচ, এরপর টিউটর। আর সবার ওপরে মাস্টার এডুকেটর!’
একইসঙ্গে বুলবুল জানালেন, গত বছরই লেভেল ওয়ান শেষ করেছিলেন তিনি। এবার লেভেল টু, গোটা বিশ্ব থেকে মাত্র ২৩ জন এই লেভেল করার সুযোগ পেয়েছেন; যার মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের বুলবুল- ‘দেখুন, লেভেল টু হচ্ছে আরও বড় পরিসরের। এটি হচ্ছে ক্রিকেট, সায়েন্স, ম্যানেজমেন্ট; এটি অনেক বড় লেভেলের কোর্স। এই কোর্সটা আমাদের করিয়েছে ক্রিকেট নিউজিল্যান্ড, আইসিসির একাডেমি আর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার টার্নার ক্যাম্বেল মিলে লেভেল ‘টু’র পুরো কারিকুলাম তৈরি করেছে।’
গত শুক্রবার মাস্টার এডুকেটর বনে গেছেন ৫৫ বছর বয়সি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এই অর্জনের পর দায়িত্বটাও বেড়ে গেল আইসিসির এই কর্মকর্তার। তাই তো সহসাই নেমে পড়তে হচ্ছে নতুন লড়াইয়ে। এই সুখবরটাও দিলেন দেশের টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি করে ইতিহাসে নাম লেখানো এই মহাতারকা, ‘এখন আমরা বিভিন্ন দেশে গিয়ে টিউটর তৈরি করব। ২৩ ও ২৪ মে আফগানিস্তানের হাই পারফরম্যান্স ওয়ার্কশপ আমি একা পরিচালনা করব, ইনশাআল্লাহ! ওদের কোচরা আবুধাবিতে চলে এসেছে। ২৬ থেকে ৩১ মে আইসিসির লেভেল থ্রি কোর্স আফগানিস্তানের জন্য করব।’
এর সঙ্গে আরেকটা সুখবর দিলেন বাংলাদেশের হয়ে ১৩ টেস্ট ও ৩৯ ওয়ানডে খেলা বুলবুল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের এই কোর্সে থাকবেন বাংলাদেশের আরেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল। যিনি এই মৌসুমেই ক্রিকেটকে গুডবাই বলেছেন। এখন কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর পরিকল্পনা করেছেন। তার অংশ হিসেবে অংশ নেবেন আইসিসির এই লেভেল থ্রি কোর্সে।
এমন আকাশছোঁয়া অর্জনের পর শুভেচ্ছায় ভেসে যাচ্ছেন বুলবুল। অন্তর্জালে এই কিংবদন্তির ফেসবুক ওয়ালে চোখ রাখলেই এর সত্যতা মিলছে। সেখানে আমিনুল ইসলাম বুলবুলও নিজের এই সংগ্রামের গল্পটা ছোট্ট করে তুলে ধরেছেন, ‘আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যতি পড়েছে প্রায় বিশ বছর হতে চলল। কিন্তু ক্রিকেটকে বিদায় বলা হয়নি। বলতে পারিনি। কারণ খেলা ছাড়ার পরও ক্রিকেট নিয়েই ছুটে চলেছি। সেটা এশিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণে। বলতে পারেন এশিয়ার বিভিন্ন কোনায় কোনায় ক্রিকেট নিয়ে ছুটেছি। এই ছুটে চলার পথে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ক্রিকেটকে ভূমিষ্ঠ হতে দেখলাম! আজ তাদের কেউ উঠে দাঁড়িয়েছে। কেউ হামাগুড়ি দিচ্ছে। কেউ খুব দ্রুত দৌড়াচ্ছে।’
বুলবুল আরও যোগ করেন, ‘যখন ক্রিকেট খেলতাম তখন রানের জন্য উইকেটের মাঝখানে যে গতিতে দৌড়েছি তারচেয়ে অনেক বেশি গতিতে এই দেশগুলোর ক্রিকেট উন্নয়নে দৌড়েছি। সত্যি এখন ক্লান্ত মনে হয় মাঝেমধ্যে। কিন্তু ইংলিশ সাহিত্যের বিখ্যাত কবি, যার একটা কবিতা অনেক রাজনীতিবিদ জীবনের দর্শন হিসেবে দেখেছেন, সেই রবার্ট লি ফ্রস্টের বিখ্যাত কবিতার লাইন, ... বাট আই হ্যাভ প্রমিজেজ টু কিপ... অ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ। আমার কাছেও কর্ম দর্শন। এই লাইনগুলো থেকে নতুনভাবে অনুপ্রেরণা পাই। ভাবি, এখনও অনেক কিছু করতে বাকি। মহান এই খেলাটার জন্য আরও কিছু করতে চাই। এটা নিজের কাছে আমার নিজের প্রতিশ্রুতি।’
দুই দশক আগে জাতীয় দলকে বিদায় জানিয়েছেন তিনি। ব্যাট-বল তুলে রেখে দেশের ক্রিকেটে ভিন্নভাবে জড়িয়ে থাকার একটা পরিকল্পনাও ছিল তার। সেজন্য নানা ধাপ পেরিয়ে নিজেকে প্রস্তুতও করেছিলেন। একের পর এক কোচিং কোর্সের ধাপ পেরোলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটে অবহেলিতই থেকে গেছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল! যেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অবহেলাই পেয়ে এসেছেন তিনি। চারপাশ থেকে নানাভাবে বুলবুলের এমন অর্জনের গল্প বিবিসির কর্তাদের কানে গেলেও না দেখার ভান করেই আছেন বছরের পর বছর! অথচ দেশের ক্রিকেটে বিদেশি কোচদেরই দাপট!
আমিনুল ইসলাম বুলবুলের এমন অর্জনের দিনে এই প্রসঙ্গটাও সামনে এসেছে। দেশের এই কিংবদন্তি এখন কোচদের কোচের চেয়েও অনেক ওপরে। আর কতকাল তাকে অবহেলা করবে বিসিবি? জাতীয় দলের কোচ হিসেবে তাকে কি ভাবা হবে সহসা?
এমন প্রশ্নের মুখে কিছুটা বিব্রতই হলেন বুলবুল। দুবাইয়ে টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে একটা বাক্যই ভেসে এলো, ‘আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে এখানে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ কথায় কোথায় যেন একটা অভিমানের সুর লেগে থাকল!
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.