প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩ ১০:৩২ এএম
আপডেট : ২১ মে ২০২৩ ১০:৩৬ এএম
কোয়াবের প্রথম সাধারণ বার্ষিক সভা উপলক্ষে মিরপুরে বসেছিল ক্রিকেটারদের মিলনমেলা। ক্রিকেটাদের সংগঠন, ক্রিকেটারদের দাবি-দাওয়া আদায়ের মাধ্যম কোয়াব। কাগজে-কলমে ক্রিকেটাদের স্বার্থ দেখার কথা তাদের। সভাপতি নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল বারবারই জানান, তারা কাজ করছেন ক্রিকেটারদের পক্ষে; ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিয়ে।
আরও পড়ুন : বুলবুল আরও উঁচুতে
তবে কোয়াবের ওই অনুষ্ঠানে অনেক ক্রিকেটারই প্রতিদিনের বাংলাদেশের কাছে জানিয়েছে, কোয়াবের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা নেই। নিজেদের সমস্যার কথা ঠিকঠাক তুলেও ধরতে পারেন না। তবে ক্রিকেটারদের এই অভিযোগ অনুযোগ সত্ত্বেও নিজেদের সফল দাবি করছে কোয়াব।
মিরপুরে বার্ষিক সাধারণ সভার পর দীর্ঘ ৯ বছর পর কমিটিতে এসেছিল রদবদলের সুযোগ। কিন্তু কোনো ক্রিকেটার কোয়াবের নেতৃত্বে আসার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের সভাপতি নির্বাচিত হন নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল। ২০১৪ সালে দায়িত্বে আসার পর দীর্ঘ ৯ বছর দায়িত্বে ছিলেন তারা। আগামী চার বছরও তাদের হাতে থাকবে নেতৃত্ব। তবে কোয়াবের পাশাপাশি বিসিবির দায়িত্বে থাকায় স্বার্থের সংঘাত হবে কিনা সেটাও পরিষ্কার করেছেন দুর্জয়। তার উল্টো দাবি বিসিবিতে কাজ করায় ক্রিকেটারদের স্বার্থ দেখাটা সহজ হবে।
তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটারদের আগ্রহ বা চাহিদা আমরা বোর্ডের ভেতরে থেকে যদি সমাধান করতে পারি, আমার মনে হয় এর চেয়ে ভালো কোনো সুযোগ নেই।’ বোর্ডে কাজ করার সুবাদে ক্রিকেটারদের স্বার্থের বিষয়টি দেখা সহজ হয়েছে বলে জানান, ‘ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ বাড়ার কারণে আমাদের কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে গেছে।’ বিসিবিতে কোয়াবের স্বীকৃতি না থাকলে স্বার্থের দ্বন্দ্ব আসত বলে মনে করেন, ‘স্বার্থের সংঘাত আগে ছিল। যখন বোর্ড কোয়াবকে স্বীকৃতি দিত না। এখন বোর্ড স্বীকৃতি দিয়েছে।’
কোয়াবের নেতারা বিসিবির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও স্বার্থের দ্বন্দ্ব হবে না এমনটা ভাবছেন। তবে সাবেক ক্রিকেটার ও চ্যানেল আইয়ের ক্রীড়া সম্পাদক সাইদুর রহমান শামীম মনে করেন, স্বার্থের সংঘাত থেকেই যাচ্ছে। এই নিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের পর ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-কোয়াবের এজিএম ও নির্বাচন হলো। দেখে বুঝলাম কোয়াব আরও বেশি করে বিসিবির পেটে ঢুকে গেছে। ক্রিকেটারদের সংগঠন, স্বতন্ত্র সত্তা খুঁজে পাওয়া গেল না। দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংগঠন বিসিবি, তার তদারকি, দিকনির্দেশনা থাকতেই পারে, থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোয়াবের আলাদা প্ল্যাটফর্ম থাকবে না কেন? বিসিবির পরিচালকদের একটা বড় অংশ সাবেক তারকা ক্রিকেটার। এরাই কোয়াব প্রতিষ্ঠা করেছে। এজিএমের দিনে মঞ্চে তারা থাকতেই পারে। কিন্তু এজিএমের ডায়াসজুড়েই বিসিবির কর্মকর্তা বর্তমান ও সাবেক পরিচালকদের আধিক্য প্রমাণ করে বিসিবির অভিভাবকত্ব মেনে নিয়ে, তাদের তালুর নিরাপত্তায় এগিয়ে যাচ্ছে কোয়াব! অন্যান্য দেশের ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কি এভাবেই তাদের ক্রিকেট বোর্ডের নিবিড় ছায়ায় এগিয়ে যায়? জানি না, জানার চেষ্টা করতে হবে। এই কোয়াব কি ক্রিকেটারদের প্রয়োজনে বিসিবির কাছ থেকে চোখে চোখ রেখে অধিকার আদায় করতে পারবে? মনে হয় না। তবুও কোয়াবের পুনর্নির্বাচিত সব কর্মকর্তাকে অভিনন্দন ও শুভকামনা।’
কোয়াবের এজিএমে অসংখ্য ক্রিকেটারের উপস্থিতি ছিল। তবে ছিলেন না জাতীয় দলের সিনিয়র পাঁচ ক্রিকেটার- সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাদেরকে আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়েছিল। তবুও দেখা যায়নি কোয়াবের অনুষ্ঠানে। এমনকি কোনো ক্রিকেটার আগ্রহ প্রকাশ করেননি নির্বাচনে অংশ নিতে। তারা কেন নির্বাচনে অংশ নেননি সেটাও পরিষ্কার করেছেন দুর্জয়। আন্দোলনের পর কোয়াবের সঙ্গে আলোচনা করে সেই ক্রিকেটাররা নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন বলে দুর্জয় জানান। এই নিয়ে দুর্জয়ের ভাষ্য, ‘কোয়াব একটি রেজিস্টার্ড ওয়েলফেয়ার সংগঠন। এর কিছু নিয়মনীতি আছে। কমিটিতে নতুন যারা আছে, তাদের জন্য সব সময় রাস্তা খোলা আছে। তবে কোয়াবের যে গঠনতন্ত্র সেটি মেনে আসতে হবে। তাদের সঙ্গে আমরা দুয়েকবার বসার পরে তারা আগ্রহটা হারিয়ে ফেলেছিল।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেয়নি, ওরা হয়তো চিন্তা করেছে আমরা এখনও খেলছি, আমরা আরও খেলব। আমি ব্যক্তিগতভাবে আহ্বান করেছি। আসলে এটা তো জোর করার বিষয় নয়। আগ্রহের বিষয়। ওরা হয়তো খেলাধুলায় আরও সময় দিতে চায়।’
শুধু নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা নয়, ক্রিকেটাররা ঘনিষ্ঠ নন কোয়াবের সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ক্রিকেটার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কোয়াবের নবনির্বাচিত সভাপতি অবশ্য সেটা মনে করেন না। তার মতে, ক্রিকেটাররা এখন আস্থা রাখেন কোয়াবের ওপর, ‘যারা আন্দোলন করেছিল, তারাও কিন্তু আজকে এজিএমে তাদের ভিডিওবার্তা দিয়েছে। সেই ভুল বোঝাবুঝির জায়গায় আমরা এখন আর নেই। তারাও একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’ আন্দোলনে জড়িত থাকা ক্রিকেটাররা এখন একসঙ্গে কাজ করছে বলেও জানান দুর্জয়, ‘যারা আন্দোলনে গিয়েছিল, যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল, তারা একসঙ্গে কাজ করার প্ল্যাটফর্মে এসেছে।’
এতদিন কোয়াবে উপেক্ষিত ছিলেন দেশের নারী ক্রিকেটাররা। এবার তাদেরকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোয়াব। এ ছাড়া অফিসহীন থাকা কোয়াব এবার নিজেদের কার্যালয় করার পথেও এগোবে। শুধু এই দুই কাজ নয়, ক্রিকেটারদের উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে এই সংগঠন, অনেকদিনের পুরানো সেই খোয়াব ফের নতুন করে দেখাল কোয়াব।
এখন স্বপ্ন সফল হলেই হলো!