রংপুর অফিস
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৩ ১০:১২ এএম
আপডেট : ২৮ মে ২০২৩ ১০:৩৩ এএম
মাত্র ২২ বছর বয়সে ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের অন্যতম কান্ডারি রংপুরের সিরাত জাহান স্বপ্না। দুদিনের ছুটিতে রংপুরে আসা স্বপ্না শুক্রবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুটবল থেকে ইতি টানার কথা প্রকাশ করলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
আরও পড়ুন : পিএসজিকে শিরোপা জিতিয়ে রোনালদোকে টপকালেন মেসি
কী কারণে ফুটবল ছাড়লেন স্বপ্না- এ নিয়ে নানা কৌতূহল জাগে ফুটবলপ্রেমীসহ অনেকের। এই নারী ফুটবলার জানালেন, পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্যই ফুটবল ছেড়েছেন!
গতকাল শনিবার সকালে রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্করণী ইউনিয়নের পালিচড়ার জয়রাম গ্রামের বাড়িতে গিয়ে স্বপ্নাকে পাওয়া যায়নি। স্বপ্নার মা লিপি বেগম জানান, শুক্রবার মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুরে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন স্বপ্না। মুঠোফোনে স্বপ্না বলেন, ‘আমি খেলাধুলা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হলাম। খেলা ছাড়লাম, এখন পরিবার ও নিজেকে সময় দিচ্ছি। ভবিষ্যতে আর ফুটবল খেলার ইচ্ছা নেই। অভিমান থেকে আমি ফুটবল ছাড়িনি। যেহেতু সারা বছর ক্যাম্পে থাকি, নিজেকে ও পরিবারকে দেওয়ার মতো সময় হয় না। তাই ভাবলাম এখন নিজেকে ও পরিবারকে সময় দেওয়া দরকার।’
স্বপ্না আরও বলেন, ‘আমাদের কর্মক্ষেত্র কিংবা জীবন চিরস্থায়ী নয়। কোনো না কোনো সময় এ দুটিকে বিদায় জানাতে হয়। হয়তো ফুটবল থেকে আমার বিদায় একটু আগে লেখা ছিল। এ ছাড়া দেশের নারী ফুটবল এখন ভালো জায়গায় রয়েছে। জুনিয়ররা ভালো পারফর্ম করছে। তাদের জন্য জায়গা করে দিতে হবে। আমরা যদি সারা বছর জায়গাগুলো ধরে রাখি তাহলে তারা কীভাবে সুযোগ পাবে।’
ফুটবল কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনও নারী ফুটবল দলের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানছেন। এ নিয়ে স্বপ্না বলেন, ‘স্যার কেন অবসরে গেলেন তা আমি বলতে পারব না। ওনার হয়তো মনে হয়েছে অবসর নেওয়া দরকার, তাই অবসরে গিয়েছেন। স্যার যদি চলে যান তাহলে নারী ফুটবলের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। ওই মানুষটার জন্য নারী ফুটবল দল আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, নারী ফুটবল দলে অনেক সফলতা এসেছে।’
স্বপ্নার মা লিপি বেগম বলেন, ‘আমার অসুস্থ থাকার কথা শুনে ডাক্তার দেখাবে বলে দুই দিনের ছুটি নিয়ে রংপুরে এসেছিল স্বপ্না। এসে বলে আমার ফুটবল আর ভালো লাগে না, আর ফুটবল খেলব না। সে ১১ বছর ধরে ১৩ থেকে ১৪টি দেশে ফুটবল খেলেছে। তার বোঝার বয়স হয়েছে। আমার মেয়ে ভেবে-চিন্তে, বুঝে-শুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি হুট করে রাগের মাথায় সে সিদ্ধান্ত নেয়নি।’
ফুটবলার স্বপ্নার মা আরও বলেন, ‘মেয়ে হিসেবে স্বপ্না অনেক দিন খেলাধুলা করেছে। ছেলেমানুষ হলে বলতাম কতদূর খেলে খেলুক। এ ছাড়া আমরা অসুস্থ থাকি, স্বপ্না ছাড়া আমাদের খোঁজ-খবর নেওয়ার মানুষ নেই। মেয়ে বাইরে থাকলে আমাদের চিন্তা হয়, আবার আমরা অসুস্থ থাকলে মেয়ে টেনশন করে। এজন্য সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর ফুটবল খেলবে না। আগে স্বপ্নার আয় দিয়ে আমাদের সংসার চলত, এখন আবাদ-সুবাদ করে সংসার চালাব।’
নয়াপুকুরের বর্গাচাষি মোকছেদ আলীর ছোট মেয়ে সিরাত জাহান স্বপ্না। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলে অসাধারণ প্রতিভা ছিল তার। তাই চতুর্থ শ্রেণিতে থাকাকালীন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে পালিচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে খেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল স্বপ্না। এরপর তার খেলা নিয়ে গ্রামের মানুষ নানান সময়ে নানান কথা বলেছে। সেই সব কথা সহ্য করতে না পেরে স্বপ্নার পরিবার তার খেলা বন্ধ করে দেয় প্রাইমারি স্কুলে থাকাকালীন সময়ে। এরপর স্কুলশিক্ষক হারুন অর রশিদের অনুরোধে আবারও স্বপ্নার মা মেয়েকে খেলার মাঠে ফেরান। ২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ দলে ডাক পান স্বপ্না। এরপর আর স্বপ্নাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক ম্যাচে দলকে জিতিয়ে আনার গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সাফে স্বপ্নার জোড়া গোলে ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।