প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩ ১০:১৪ এএম
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৩ ১০:১৭ এএম
মুমিনুল হক নামে পরিচিত হলেও সৌরভ তার আরেক নাম। তবে নামের মতো তার ব্যাট সৌরভ ছড়াচ্ছিল না, অন্তত শেষ কিছুদিন ধরে তো বটেই। সময়ের হিসাবে শেষ ২৫ মাসে নামের পাশে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না তার।
আরও পড়ুন : জোড়া সেঞ্চুরিতে উজ্জ্বল শান্ত
টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি যার, সেই মুমিনুলের জন্য এমন পরিসংখ্যান তো মোটেও ভালো কিছু ছিল না। সেঞ্চুরি না থাকুক, কিন্তু মুমিনুলের ব্যাট যে রানও পাচ্ছিল না! সে সব আক্ষেপই ঘুচল কাল। নামের মতো মুমিনুলের ব্যাটও ছড়াল সৌরভ, সেঞ্চুরি এলো অবশেষে।
কাজটা অবশ্য সহজ ছিল না। যখন দিনের প্রথম ঘণ্টায় তিনি উইকেটে এলেন, জাকির হাসান সবে বিদায় নিয়েছেন। এরপর বিরতি পর্যন্ত কোনো ভুলচুক নয়। নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে নির্বিঘ্নে পার করলেন সে সময়টা।
বিপত্তিটা বাধল বিরতির পর। শান্ত বিদায় নিলেন জোড়া সেঞ্চুরির পর। এরপর যখন মুশফিকুর রহিম বিদায় নিলেন দ্রুতই তখন আরও একটা ধস চোখরাঙানি দিচ্ছিল যেন বাংলাদেশকে। অভিজ্ঞ মুমিনুলের প্রয়োজনটা সবচেয়ে বেশি তখনই ছিল দলের। বাঁহাতি ব্যাটার মিটিয়েছেন সে প্রয়োজনটাই। লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে গড়লেন আরও এক বিশাল জুটি। তাতে ভর করেই তো বাংলাদেশ পেল ৬৬১ রানের বিশাল এক সংগ্রহ।
এ ইনিংসের মাহাত্ম্য অন্য জায়গায়। এ সেঞ্চুরি যে এলো অনেক তৃষার পরে, ভুখের পরে! সময়ের হিসাবে তো ২৫ মাস, আর ইনিংস হিসাবে ২৬; এই সময়টায় তাকে থাকতে হয়েছে অপেক্ষায়।
সে অপেক্ষাটা তিনি শেষ করলেনও নিজের চিরচেনা ঢঙে! ‘সৌরভ ছড়ানো’ বলা মূলত সে কারণেই। ২০২১ সালে নিজের সবশেষ সেঞ্চুরিটা তিনি করেছিলেন বেজায় কম স্ট্রাইক রেট নিয়ে। ফাঁকা জায়গা খুঁজে নিয়ে বাউন্ডারি বের করাই মূলত টেস্টে তার সহজাত ব্যাটিং। কিন্তু পাল্লেকেলের ওই ইনিংসে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ৪০-এর আশপাশে। আফগানদের বিপক্ষে মুমিনুল শুরু থেকেই ছিলেন সপ্রতিভ।
একেবারে শুরু থেকে নয় অবশ্য। আগের ইনিংসে যে ২৫ বল খেলেছেন, তাতে মোটেও স্বচ্ছন্দে ছিলেন না। ছিলেন না গতকালকের এই ইনিংসের শুরুতেও। শুরুর দিকে তার ইনিংসে নিয়ন্ত্রণের সংখ্যা ছিল ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ বলে। সেঞ্চুরিটা যখন ছুঁলেন, তখন তা গিয়ে দাঁড়াল ৮০ শতাংশে। মানে ১০০ বলের ৮০টাতেই তিনি খেলেছেন মাঝ ব্যাটে।
স্ট্রাইক রেটটাও সব সময় ছিল ৮০-এর কাছাকাছিই। ৬৭ বলে ফিফটির পর সেঞ্চুরিটা তিনি করলেন নিজের খেলা ১২৩তম বলে গিয়ে। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে নিজাত মাসুদের একটা বাউন্সার এসে আঘাত করেছিল তার কাঁধে। মুমিনুলকে তাও টলানো যায়নি। ৯০ থেকে ১০০-তে যেতে তিনি খেলেছেন মাত্র ১৪ বল। দিনের শুরু থেকেই বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল দ্রুত রান তোলার। প্রথম দুই সেশনে পাঁচের আশপাশে রান রেট তা-ই বলে দিচ্ছিল। প্রায় তিন সেশন জুড়ে মুমিনুলের সাবলীল ব্যাটিংয়ের ফলেই মূলত ধরে রাখা গেছে তা।
তার ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত যদি এতেও পরিষ্কার না হয়, তাহলে নজর দেওয়া উচিত তার শটগুলোর ওপর। ফ্লিক, লেট কাট… যা-ই খেলেছেন, হয়েছে মাঝব্যাটে; ফিল্ডারদের ব্যূহ ভেদ করে বেরিয়ে গেছে গুলির বেগে।
অমন ব্যাটিংয়ের পর সেঞ্চুরিটা তৃপ্তিদায়ক বটে, যদিও মুমিনুলের উদযাপনটা হয়ে রইল সাদামাটাই। ব্যাটটা তুললেন স্রেফ। উদযাপনের মতোই ‘সাধারণ’ তার দুঃসময় পেছনে ফেলার কৌশলও। সংবাদ সম্মেলনে জানালেন, ‘প্রক্রিয়াটা’ মেনে এগোনো, আর স্রষ্টায় ভরসা রাখা ছাড়া আর কোনো উপায়ই নেই।
সবকিছু যত সাধারণই হোক, মুমিনুলের ব্যাটিংটা হয়েছে অসাধারণ। এমন সৌরভ ছড়ানো মুমিনুলকেই তো চাই!