× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৫০ বছর বয়সেও ভারোত্তোলনে সফল শাম্মী নাসরিন

হৈমন্তী শুক্লা

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩ ১৭:৪৪ পিএম

আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৩ ১৭:৫৭ পিএম

৫০ বছর বয়সেও ভারোত্তোলনে সফল শাম্মী নাসরিন

পাওয়ারলিফটিং। শক্তির খেলা। কঠোর মনোবল আর চেষ্টায় বয়সকে তুড়ি মেরে প্রতিদিন নিজেকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলেন শাম্মী নাসরিন। মিরপুরে এ সুপারফিট জিমে গিয়ে দেখা যায়, নিরলসভাবে শরীরচর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন শাম্মী নাসরিন। 

আরও পড়ুন - বন্ধু তাসকিনের সন্ধান দিলেন রাজা

বছর দশেক আগে নানা রকম শারীরিক জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে বড় ছেলের সঙ্গে জিমে যেতে শুরু করেন শাম্মী। সুস্থতার সঙ্গে সেখানে যোগ হয় অন্যরকম ভালো লাগা। আকর্ষণ বাড়ে পাওয়ারলিফটিংয়ের ওপর। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি জানান, একজন গৃহিণী থেকে পাওয়ারলিফটার হয়ে ওঠার চড়াই-উতরাইয়ের গল্প।

বলেন, ‘আমার বয়স তখন ৪০ বছর। শারীরিক নানা অসুবিধার মধ্যে ছিলাম। ডায়াবেটিস বর্ডার লাইনে ছিল। প্রেশারটা ছিল বেশি। বড় ছেলে তখন জিম করত। তাকে বললাম, আমি জিমে যাব’ ছেলে বলল, তুমি কি পারবা? গিয়ে দেখো। ওর বন্ধুর জিম ছিল। ওখানে যাওয়া শুরু করলাম। কিছুদিন যাওয়ার পর আমার শারীরিক সমস্যা অনেকটা ঠিক হয়ে গেল। আমার স্বামী কম্বাইন্ড জিমে যাওয়াটা পছন্দ করলেন না। বললেন, ছেলে-মেয়ে কীভাবে একসঙ্গে জিম করে? আমার ছেলে বলল কোনো অসুবিধা নাই, আমি আছি মায়ের সঙ্গে।’

এভাবেই শুরুটা হয়েছিল শাম্মীর। ধীরে ধীরে জিমের ওপর টান বাড়ল। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতে শুরু করে পাওয়ারলিফটিং। মজার বিষয় হচ্ছে, একসময় ছেলে জিম ছেড়ে দিলেও শাম্মী ছাড়েননি।

তিনি জানান, সন্তানদের অনুপ্রেরণা ছিল। তবে একজন গৃহিণী হিসেবে এই খেলাকে শুরুতে সহজভাবে নেয়নি আশপাশের মানুষ। পড়তে হয়েছে কটাক্ষের মুখে। বলেন, ‘আশপাশের লোকজন ভালো চোখে দেখত না। সব খেলারই তো একটা কস্টিউম থাকে, এটা পরার পরে বলত যে একজন গৃহিণীর কী দরকার আছে এগুলা পরার। ঘরে বসে থাকলেই তো হয়। ঘরে বসেই কিছু করা যায়। বাইরে কী দরকার। আত্মীয়স্বজন সবার কাছ থেকেই নানা রকম কথা শুনতে হয়েছে।’ 

সমালোচনার মুখে নিজেকে উপযুক্ত করে তোলেন শাম্মী। এরপর জিমের মালিকের অনুরোধে নিয়মিত পাওয়ারলিফটিং শুরু করেন। অংশ নিতে শুরু করেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। শাম্মী জানান, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে পাওয়ারলিফটিংটা শুরু হয়। ২০১৯-এ তিনি অংশগ্রহণ করেন। সেবার ফাইনালে যেতে পারেননি। কিন্তু বেশ ভালো করেছিলেন। সবাই তখন খুব সাহস জুগিয়েছেন, বাহবা দিয়েছেন। সেটা যেন আরও অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করল। পরের বছর একটু জেদ নিয়েই নিজেকে তৈরি করতে শুরু করলেন। পরিশ্রমের ফলও এলো। পেলেন তৃতীয় পুরস্কার। 

জিমে ব্যস্ত সময় পার করছেন শাম্মী নাসরিন

শাম্মীর বয়স এখন ৫০ বছর। খুব সরল হাসি দিয়ে অকপটে বললেন, সার্টিফিকেটে বয়স ৪৮। তবে সেখানে দুই বছর কমানো আছে। বয়স অনুযায়ী মাস্টার ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা করতে চান তিনি। তবে দেশে এই ক্যাটাগরিতে সেভাবে পাওয়ারলিফটিং না হওয়ায় লড়তে হয় তরুণদের সঙ্গে। প্রতিযোগী সবাই বয়সে অনেক ছোট। ছেলে-মেয়ের বয়সি। তাদের সঙ্গে খেলতেও একটা চাপ হয়ে দাঁড়ায় তার কাছে। তবে সহযোগী-প্রতিযোগী সবার কাছেই শাম্মী হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণা। সবার কাছে তিনি আন্টি হিসেবেই পরিচিত।

তিনি বলেন, ‘জিমে ছেলে-মেয়েরা বয়সে আমার ছোট। ওরা বলে আন্টি আমরা তোমাকে দেখে খুব উৎসাহ পাই। তোমাকে দেখে জিমে আসি। তুমি আমাদের অনুপ্রেরণা জোগাও। তখন আমার ভালো লাগে। আমাকে তারা ভীষণ ভালোবাসে। আমিও স্নেহ করি, আদর করি। যখন জিমে থাকি, তখন বয়সের কথা ভুলে যাই। পরিবারের মতো ওরাও আমার খুব আপন।’

পাওয়ারলিফটিং মূলত তিনটি লিফটে সর্বোচ্চ ওজনের তিনটি প্রচেষ্টা নিয়ে গঠিত। যেমন স্কোয়াট, বেঞ্চ প্রেস এবং ডেড লিফট। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে শাম্মী এবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলতে যাচ্ছেন। এ বছর ডিসেম্বরে যাচ্ছেন মালয়েশিয়ায় এশিয়ান কাপ খেলতে। দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

তাকে দেখে পাওয়ারলিফটিং, শরীরচর্চা ও খেলাধুলায় আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে। সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় অনেকেই এগিয়ে আসেন তাদের আন্টি শাম্মীর কাছে। নিজে থেকেই প্রিয় আন্টিকে নিয়ে অনেকে বলেন, আন্টি জিমে ঢুকলেই জিম প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এই বয়সের কাউকে এত শক্তিশালী দেখে ভালো লাগে, নিজের মধ্যে কষ্ট করার তাগিদ হয়।

শাম্মী নাসরিন চান সব সংকট পার করে নারীরা খেলাধুলাতেও সামনে এগিয়ে যাবে। এর জন্য পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা জরুরি বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘এখনও নারীদের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিকূলতা আছে। বিশেষ করে আমরা যারা হাউস ওয়াইফ, তাদের জন্য তো আছেই। আসলে তো মুখে মুখে বলা হয় ছেলে-মেয়ে সমান অধিকার। কিন্তু সেটা তো পাচ্ছি না ওভাবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী, সেটা একটা সাহস। সবাইকেই বলতে চাই, আমরা নারী, আমাদের মধ্যে অনেক প্রতিভা আছে, শক্তি আছে। কেউ খেলাধুলা পছন্দ করেন আবার কেউ না-ও করতে পারেন। কিন্তু সুস্থ থাকার জন্য নিজের জন্য একটা সময় রাখা দরকার, শরীরচর্চা করা দরকার।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা