প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০৭ পিএম
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৫০ পিএম
স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল থেকে প্যাট কামিন্স হয়ে মিচেল স্টার্ক এবং ট্রাভিস হেড। বিশ্বকাপের দামামা বাজার সপ্তাহ তিনেক আগে অস্ট্রেলিয়া শিবির যেন মিনি হাসপাতাল। একের পিঠে আরেক করে লম্বা হচ্ছে চোটে পড়া খেলোয়াড়দের তালিকা।
বিশ্বকাপের আগে জোরালো হচ্ছে বড় শঙ্কাও। বৈশ্বিক আসরে ইনজুরি কি ছিটকে দেবে দলের অন্যতম তারকাকে? শিরোপাপ্রত্যাশী প্রায় প্রতিটি দলেই এমন প্রশ্ন ঘুরছে। সেরা বেশকিছু খেলোয়াড় হারানোর ভয়ে আছে সবকটি দলই।
বাংলাদেশ
অল্প সময়ে লম্বা দূরত্বে ট্রাভেলিং, প্রচণ্ড গরম কিংবা হুটহাট বৃষ্টি, পিচ্ছিল মাঠ এবং ব্যস্ত সূচি— খেলোয়াড়দের চোটে পড়ার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এশিয়া কাপ। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আসরে ইনজুরিতে পড়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। টাইগার পেসার অবশ্য দ্রুতই সেরে উঠেছেন। তবে গ্রুপ পর্বের দুটি ম্যাচ খেলা নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে বাড়ছিল শঙ্কা। হ্যামস্ট্রিং চোটে পড়া ব্যাটারকে নিয়ে ঝুঁকিও নেয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। পুনর্বাসনের মাঝ দিয়ে যাওয়া শান্তকে পুরো ফিট পেতে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও রাখেনি বিসিবি। টাইগারদের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভকে বিশ্বকাপে পাওয়া নিয়ে বেশি সতর্ক বাংলাদেশ।
চোটের মিছিলে আরেকটি নাম হয়ে থাকা তামিম ইকবালও ফিরছেন। লম্বা সময়ের চিকিৎসা শেষে চালিয়ে যাচ্ছেন পুরোদমে অনুশীলন। গ্রোয়িন ইনজুরিতে টাইগারদের বড় আক্ষেপের নাম হতে যেতে বসা তামিমের ফেরাটা বড় স্বস্তির।
অবশ্য তামিম ফিরলেও সাকিব আল হাসানের দল হারিয়েছে পেস অ্যাটাকের বড় এক অস্ত্র। হাঁটুর ইনজুরি এতটাই প্রকট যে ইবাদত হোসেন ছিটকে গেছেন লম্বা সময়ের জন্য। পুরোপুরো সেরে মাঠে ফিরতে ইবাদতের অন্তত আট মাস সময় প্রয়োজন। হাঁটুর চোটই তাকে দর্শক বানিয়ে দিয়েছে বিশ্বকাপে।
অস্ট্রেলিয়া
আঙুলের করে গোনা স্রেফ ১৭ দিন বাকি। বিশ্বকাপের এত কাছে এসে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে চোট। প্যাট কামিন্স, স্টিথ স্মিথসহ অজিদের বড় বড় নামগুলোকে নিয়ে শঙ্কা, ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপের দামামা বাজার আগে সেরে উঠবে তো এরা? বৈশ্বিক আসরে তারা স্রেফ দর্শক হয়েই থাকবেন নাকি চোটের সঙ্গে আপস করে খেলতে হবে?
আপসের প্রশ্নে এবার হয়তো ছাড় পেয়ে যাবেন প্যাট কামিন্স। চলতি বছরের জুলাইয়ে অ্যাশেজের পঞ্চম টেস্টে কবজিতে চোট পান অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। ভয়ানক সেই চোট কামিন্সকে ওই টেস্ট তো বটেই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও ব্রাত্য করে রেখেছে। অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমের খবর, সেপ্টেম্বরে ভারতের মাটিতে সিরিজে খেলবেন কামিন্স, থাকবেন বিশ্বকাপের শুরু থেকেও।
তবে চোটের মিছিলে ভারী হওয়া অজিদের নামের বড় আক্ষেপের হয়ে থাকবেন ট্রাভিস হেড। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দিন চারেক আগে হাতই ভেঙে বসেছেন। সিরিজ তো শেষই, বিশ্বকাপেও তার না থাকা প্রায় নিশ্চিত। বাম হাতের ফ্র্যাকচারটা কতটা ভোগাবে ট্রাভিসকে, তা জানতেও অপেক্ষায় আছে অজিদের ক্রিকেট বোর্ড। ঠিক ছিটকে যাওয়ার মতো না হলেও শঙ্কায় আছেন অ্যাস্টন অ্যাগার। মাসলের চোট প্রোটিয়া মুলুক থেকে মাঝপথেই বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে অ্যাগারকে। তবে বিশ্বকাপের ওয়ার্ম ম্যাচে তাকে দলে পেতে আশাবাদী অস্ট্রেলিয়া।
অজিদের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে চোটাক্রান্তদের মাঝে ভারী নাম হয়ে আছেন স্টিভ স্মিথ। অ্যাশেজ সিরিজে পাওয়া লিগামেন্টের চোট স্মিথকে ছিটকে দিয়েছিল দীর্ঘ দিন। বিশ্বকাপের আগে ভারতের মাটিতে সিরিজে ফিরবেন তিনি। মিচেল স্টার্ক, ক্যামেরুন গ্রিন এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপের আগে ফিরবেন বলে আশাবাদী অস্ট্রেলিয়া।
দক্ষিণ আফ্রিকা
অ্যানরিখ নরখেকে ফিট পেতে সব চেষ্টা চালিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু নিজেকে হতভাগ্য ভাবতে পারেন প্রোটিয়া পেসার। ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে পিঠের চোটে ছিটকে গিয়েছিলেন, ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তাকে প্রোটিয়াদের জার্সিতে খেলতে দেয়নি ভাঙা বুড়ো আঙুল। বিশ্বকাপের সপ্তাহ তিনেক আগেও নরখেকে নিয়ে দুশ্চিন্তা। ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো জানাচ্ছে, এবারের পিঠের চোট এতটাই বাজে যে প্রোটিয়া পেসার পুরো বিশ্বকাপ থেকেও ছিটকে পড়তে পারেন। সেই চোটের মিছিলে শঙ্কা জুগিয়েছে সিসান্ডা মেগালার বা হাঁটুর চোট এবং প্রোটিয়াদের অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার থাইয়ের চোট। এই দুজনের ফেরার সুযোগ থাকলেও নরখেকে আপাতত ভাবনার বাইরে রাখছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তার বদলি অ্যানডিলে ফিলুকাউকেও ডাকতে পারে প্রোটিয়া বোর্ড।
পাকিস্তান
এশিয়া কাপে পাকিস্তানের শুধু হারানোর সুর। সেই সুরে বেদনার ধুয়ো হয়ে বাজছে নাসিম শাহর নাম। বিশ্বকাপে পাকিস্তান হারিয়ে বসতে চলছে তাদের পেস বোলিং ইউনিটের বড় সম্পদকে। দেশটির মিডিয়ার খবর, ভারতের বিপক্ষে কাঁধের চোটে পড়া নাসিম বিশ্বকাপের পুরোটা সময়ের জন্য ছিটকে যেতে পারেন। শুধু পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপই নয়, পিএসএল-এর ২০২৪ সালের আসরেও নাসিমকে হয়তো দর্শক হয়েও কাটাতে হতে পারে।
নাসিমের আশা আপাতত বাদই রাখছে পাকিস্তান। আরেক পেসার হারিস রউফকে পেতে আশাবাদী পিসিবি। সাইড স্ট্রেইনের চোট কাটিয়ে ঠিক সময়ে বিশ্বকাপ দলে ফিরবেন রউফ। সেরে উঠেছে চোখের নিচে বল লেগে চোটে পড়া আগা সালমানও। দেশটির গণমাধ্যমের খবর, পিঠের চোটে ভোগা ইমাম উল হকও ভালো আছেন, বিশ্বকাপে টপ অর্ডারের ব্যাটারকে শতভাগ ফিটই পাবেন বাবর আজমের দল।
শ্রীলঙ্কা
লঙ্কানদের চোটের তালিকা বেশ লম্বা। এশিয়া কাপের আগে দুশমন্ত চামিরা, ভানিদু হাসারাঙাসহ বেশকিছু তারকাকে বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই এশিয়ার মঞ্চে খেলায়নি শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু ঘরের মাঠে সহযোগী হওয়া আসরে সেই তালিকাটি দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে খানিকটা বেড়েছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে দিলশান মধুশঙ্কা, মহেশ থিকসেনার নাম।
সবচেয়ে অ্যালার্মিং হিসেবে রয়েছেন থিকসেনা। হ্যামেস্ট্রিং চোটে এশিয়া কাপের ফাইনালেও তাকে পায়নি শ্রীলঙ্কা। বিশ্বকাপের আগে ফিরবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এসএলসি মেডিকেল কমিটি জানিয়েছে, সমস্যা নেই। লঙ্কান তারকা স্পিনারকে পেলেও দুশমন্থ চামিরা হয়তো ছিটকেই গেছেন। মাসলের চোটে পড়া দিলশান মাধুশঙ্কাকে নিয়েও বড্ড শঙ্কায় শ্রীলঙ্কা। তবে হ্যামেস্ট্রিং চোটে এশিয়া কাপে ব্রাত্য হয়ে থাকা হাসারাঙা ফিরছেন। তারকা অলরাউন্ডারকে ঠিকঠাক সময়ে দলে পাবে বলে আশাবাদী লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড।
নিউজিল্যান্ড
ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে কাটাতে হতে পারে টিম সাউদিকে। ইংলিশদের বিপক্ষে গত সপ্তাহে ক্যাচ নিতে গিয়ে পাওয়া চোট অভিজ্ঞ পেসারকে শঙ্কায় রেখেছে। সেই শঙ্কার বিপরীতে এখনও নেই সবুজ বাতি। আগামী রবিবার তার হাতের আঙুল পরীক্ষা করা হবে। তারপর জানা যাবে কত দিনের মাঝে সেরে উঠতে পারেন সাউদি।
সেই হিসেবে সাউদির আশা বাদই রাখছে হয়তো নিউজিল্যান্ড। তবে দীর্ঘ সময় চোটে ভোগা কেন উইলিয়ামসকে দলে পেতে যাচ্ছে কিউইরা। কেনকে বিশ্বকাপে শুরু থেকে পাওয়া যদিও অনিশ্চিত। ইংলিশদের বিপক্ষে সিরিজে হাতে চোট পাওয়া ড্যারিল মিচেলে অবশ্য ফিরবেন।
ইংল্যান্ড
জেসন রয়ের বিশ্বকাপ স্বপ্নে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পিঠের চোট। ইংলিশদের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে দেশে রেখেই ভারতে আসতে হবে জশ বাটলারদের। রয় নেই নিউজিল্যান্ড এবং আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজেও। ইতোমধ্যে রয়ের বদলি হিসেবে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে হ্যারি ব্রুককে ডেকেছে ইংল্যান্ড। চোট কিছুটা শঙ্কার হলেও অস্ট্রেলিয়া বা শ্রীলঙ্কার মতো ভয়াবহ রূপ নেয়নি বাটলারদের দলে।
পেশিতে টান লাগা আদিল রশিদকে পুরো বিশ্রামে রেখেছে ইংল্যান্ড। চোটের শঙ্কায় থাকা বা সদ্য চোট কাটিয়ে ওঠা মার্ক উড, ক্রিস ওকস এবং বেন স্টোকস রয়েছেন বিশ্রামে। তাদের নিয়ে কোনো প্রকার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়নদের ট্রাভেল রিজার্ভ হিসেবে থাকা পেসার জোফরা আর্চারও কনুয়ের চোট কাটিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন।
ভারত
চোট ম্যানেজ করে নয়, বৈশ্বিক আসরে সেরা খেলোয়াড়কে নিশ্চিতভাবেই ফিট হিসেবে চাইবে যেকোনো দল। বিশ্বকাপের আগে এমন শঙ্কায় রোহিত শর্মার দল অবশ্য ছাড় পাচ্ছে বেশ। খেলোয়াড়দের লম্বা চোটের মিছিলে নেই বললেই চলে ভারতের নাম। তবে ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপে আক্ষেপ বাড়াতে পারে শ্রেয়াস আইয়ারের চোট। বিশ্বকাপের আগে সম্পূর্ণ ফিট শ্রেয়াসকে চাই ভারতের। কিন্তু এশিয়া কাপে সুপার ফোরের আগে অনুশীলনে পিঠে চোট পান আইয়ার।
ভারতের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড জানিয়েছে, শ্রেয়াসকে নিয়ে শঙ্কা নেই। তবে চোট সারিয়ে উঠতে এখনও খানিকটা সময় বাকি। দেশটির গণম্যাধ্যমের খবর, বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে থাকতে পারেন আইয়ার।