প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১২:১৮ পিএম
বিশ্বকাপ এলেই জ্বলে ওঠেন সাকিব আল হাসান। শুধু ব্যাট হাতে নয়, বল হাতেও দেখান ঝলক। এবারের আসর বাদ দিলে বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট মানেই উজ্জ্বল সাকিব। দুটি সেঞ্চুরি আর ১০টি ফিফটি তো সেই কথাই বলছে। ১১৪৬ রান আর ৩৪ উইকেট নিয়ে ভারতে পা রেখেছিলেন। একবার করে ৪ ও ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ডও রয়েছে তার। ক্রিকেট মহাযজ্ঞের এক আসরে ৬০০-এর অধিক রান আর ১০ উইকেটের মালিকও বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার।
ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ চলছে। আয়োজক প্রতিবেশী দেশ বলে কথা। উপমহাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে তার যে সখ্য অনেক। বাংলাদেশের ক্রিকেটার বলেই শুধু নয়। আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতাও তো কম নয় তার। সব মিলিয়ে সাকিবের কাছ থেকে ভারতের মাটিতে দুর্দান্ত কিছুই প্রত্যাশা করছিলেন ক্রিকেট অনুরাগীরা। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে চার ম্যাচ খেলে ভক্ত-সমর্থকদের হতাশ করেছেন সাকিব। কোনোভাবেই যেন ছন্দে ফিরতে পারছেন না। না ব্যাটিংয়ে, না বোলিংয়ে। চেন্নাইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ৪০ রানের ইনিংস এখন পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপে তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। আর বোলিংয়ে তার সেরা পারফরম্যান্স ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে ৩০ রানে নেওয়া ৩ উইকেট। পরের তিন ম্যাচেই পেয়েছেন মাত্র একটি করে উইকেট।
অন্যদিকে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণ এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (১১১)। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম সাকিব এখনও পর্যন্ত জাদুকরী তিন অঙ্কের দেখাই পাননি। ম্যাজিক অঙ্কের কথা না হয় বাদই দেওয়া যাক। এখনও পর্যন্ত তার ব্যাট থেকে আসেনি কোনো হাফসেঞ্চুরিও। মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি আদায় করা দেখে শেষে টনক নড়েছে সাকিবের। কাল শনিবার বাংলাদেশের লড়াই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। জায়ান্ট কিলার হলেও ওয়ানডেতে অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ থেকে অনেকটা পিছিয়ে প্রতিপক্ষ ডাচরা। এ ম্যাচে যদি দারুণ কিছু করা যায়! খেলাটা আবার সাকিবের খুব চেনা কলকাতার ইডেন গার্ডেনে। বাংলাদেশ থেকে ভেন্যুটি খুব কাছে। তাই তো সুযোগটা কাজে লাগালেন। হঠাৎ করেই দেশে ফিরে দ্বারস্থ হলেন বাল্যকালের কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের। বুধবার সকালে ঢাকায় পৌঁছেন বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন। দেশে ফিরে দুপুরেই যোগ দেন বিশেষ অনুশীলনে।
মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ইনডোরে কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের সঙ্গে অনুশীলন করেন তারকা এ অলরাউন্ডার। গতকালকের দিনটাও ঢাকায় কাটিয়েছেন। ক্রিকেটগুরু ফাহিমের সঙ্গে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন। ব্যাটিং অনুশীলনে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়ে গতকাল রাতেই কলকাতায় দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। প্রথম দিন অনুশীলন করেন তিন ঘণ্টা। ব্যক্তিগত অনুশীলনের অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো মিরপুরে আসেন সাকিব আল হাসান। সকাল ৯টা ৭ মিনিটে মিরপুর শেরেবাংলার ইনডোর স্টেডিয়ামে এসেছিলেন সাকিব। এরপর সেখানে তিন ঘণ্টার বেশি সময় অনুশীলন শেষে দুপুর ১২টা ৪২ মিনিটে ছাড়েন মিরপুর। অনুশীলন শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পথে মিরপুরে উপস্থিত সমর্থকদের রোষানলে পড়েন সাকিব। কারণটা তো সবার জানা। এমনিতে দল আটকে আছে হারের বৃত্তে। তারওপর সাকিব আছেন অফফর্মে। বিশ্বকাপে এমন পারফরম্যান্সটা ঠিক মেনে নিতে পারছেন না ক্রীড়াপ্রেমীরা। সেই ক্ষোভ থেকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে দুয়োধ্বনি হজম করেন সাকিব। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি কালো রঙের গাড়িতে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন টাইগার অধিনায়ক।
এবারের বিশ্বকাপটা মোটেই ভালো কাটছে না সাকিবের। চার ম্যাচে ১৪ গড়ে তার সংগ্রহ মাত্র ৫৬ রান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ৪০ রানের ইনিংসটি তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। বল হাতেও সময়টা ভালো যাচ্ছে না। ৬ উইকেট শিকার করতেই প্রতি ওভারে খরচ করেন ৫.৫৪ রান। আফগানদের বিপক্ষে ৩/৩০ এবারের বৈশ্বিক আসরে তার সেরা বোলিং ফিগার। আর বাঁ ঊরুর চোটে তো ভারতের বিপক্ষে খেলতেই পারেননি।
নিজেকে ছন্দে ফেরাতে সাকিব ব্যস্ত সময় কাটালেন ঢাকায়। যদিও হুট করে তার ঢাকায় আসা নিয়ে অনেকে সন্দেহ করছিলেন। বিজ্ঞাপন বা শো উদ্বোধনের জন্য এসেছিলেন কি না। কিন্তু নাহ। সেটা কেবল গুঞ্জন। সত্যিটা হলো ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা কাটাতেই পুরো সময়টা ব্যয় করেছেন সাকিব। জানা যায়, ব্যাটিংয়ের সময় নিজের মাথার অবস্থান নিয়ে স্বস্তিতে নেই সাকিব। মিরপুরে এ নিয়েই নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় নিয়ে কাজ করেন। ফ্রন্ট ফুট ও ব্যাক ফুট থেকে শট খেলার সময় শরীর যেখানে থাকা দরকার, সেখানে থাকছে না। অনুশীলনে বেশিরভাগ ড্রিলেই সাকিবের মাথার অবস্থান ঠিক করার চেষ্টা করেছেন নাজমুল আবেদীন। অভিজ্ঞ এই কোচের প্রত্যাশা- অনুশীলন সেশন থেকে আত্মবিশ্বাস পাবে সাকিব। তিনি বলেন, ‘আশা করছি সে এখান থেকে আরেকটু আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফিরতে পারবে।’ সাকিব এবারই প্রথম এমনটা করলেন না। এর আগে বিভিন্ন সময়ে ছোটবেলার আরেক কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের পরামর্শ নিয়ে সফলও হয়েছেন তিনি।
সবাই একবাক্যে একটা কথা মানবেন। মাহমুদউল্লাহ বাদে বাংলাদেশ দলের সবাই এখন অনুজ্জ্বল। বিশ্বকাপের মতো আসরে পুরো দলকে উজ্জীবিত না রেখে তার হঠাৎ করে দেশে ফেরাটা অনেকেই ভালো চোখে দেখছেন না। সমালোচকদের মতে, সাকিব দলের কথা চিন্তা না করে শুধু নিজের ব্যাটিং পারফরম্যান্স উন্নতির জন্য হঠাৎ করে ঢাকায় ফেরেন। সাকিব একা ভালো করলেও তো আর দল জিতবে না। সাফল্যের জন্য দলের মধ্যে ঐক্য থাকা চাই। ভালো টিমওয়ার্কই পারবে দলকে জয়ের পথে ফেরাতে। একজনের পক্ষে সেটা করা সম্ভব নয়।
তারপরও অনুসারীরা চাচ্ছেন খারাপ সময়টা পেছনে ফেলে ছন্দে ফিরুক সাকিব। এবং সেটা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আগামীকালের ম্যাচেই। কোচ ফাহিমের পরামর্শ কতটা মাথায় নিতে পেরেছেন সাকিব। উত্তরটা মিলবে ডাচদের বিপক্ষে ইডেন গার্ডেনসের মাঠের লড়াইয়ে।