প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:০৬ পিএম
মোরসালিনে ফুটবলের নবজন্ম
শেখ মোরসালিন সেদিন গোল করে কিছুটা সময় নিলেন। মাঠের উদযাপন সেরে সোজা চলে এলেন গ্যালারির নিরাপত্তা বেষ্টনীর কাছে। তখনও যেন মন ভরেনি। লেবাননকে রুখে দেওয়া স্ট্রাইকার চড়ে বসলেন সিঁড়িতে। বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতা কিংস অ্যারেনার দর্শকদের খুব কাছে গিয়ে ছাড়লেন হুংকার। অমন একটি ছবি নিশ্চয় চোখে পড়েছে। সেই ছবিটিকে যদি ফুটবলের নবজন্ম ভাবেন, তবে দোষের কিছু হয়তো হবে না। এমন দীপ্ত মোরসালিনে চড়েই তো দেশের ফুটবল এগোবে। হারানো দিনে ফেরার সুরটাও তো ওই হুংকারে মিশে।
প্রেম, বিরহ, অতঃপর অভিমান এবং সবশেষ মুখ ফিরিয়ে নেওয়া দর্শকদের মাঠে টানতে বাংলাদেশ ফুটবলকে অমন কিছুই করতে হবে। দিকহারা বাংলাদেশ সেটি করছেও। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে বড় বড় দলের বিপক্ষে লড়াই চালাচ্ছে। শক্তি-সামর্থ্যে বিস্তর পার্থক্য থাকলেও দেশের তরুণদের আগুনে প্রত্যয় একদিন সব এনে দেবে। জামালদের প্রতি যে বিশ্বাস হারাচ্ছে না বাংলাদেশ। না হলে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় কি অমন ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ গর্জন উঠত।
১৯৭০-৯০-এর দশকের গোড়ার দিক পর্যন্ত বাঙালির আবেগের সবটুকু জায়গা জুড়ে ছিল ফুটবল। এরপর কাটতে শুরু করল তাল। দিক হারাতে থাকা ফুটবল এমন অবস্থায় ঠেকল যে মাঠবিমুখ হলেন দর্শক। ফুটবলারদের একের পর এক ব্যর্থতার কারণে বাড়ল বিস্তর দূরত্ব।
মান-অভিমান এতটাই তীব্র হয়ে উঠল যে, দেশের ফুটবলের অস্তিত্বই ভুলতে বসলেন ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু এখন? ইউরোপিয়ান ফুটবলে বুঁদ হয়ে থাকা দর্শক-সমর্থকরা খোঁজ রাখছেন, মাঠে মোরসালিন-জামালরা যে আস্থার মান রাখছেন। প্রবীণরা প্রায়ই বলেন, ফুটবলের দিন শেষ। এমন বাংলাদেশ দেখে তারাও নিশ্চয় মত বদলাবেন।
বসুন্ধরা কিংসের মাঠে বাংলাদেশের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে ৭৯ ধাপ এগোনো লেবাননকে রুখে দেওয়ার পর আফসোস আসে কোচের— ‘ইস, সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে জিততে পারতাম।’ মোরসালিনরাও বলেন, আমরা আগামীতে জিততেই নামব। কদিন আগেও যাদের মুখে লেগে থাকত ভালো খেলার রেকর্ডিং বুলি—‘দোয়া করবেন, যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি।’
অথচ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ‘আই’ গ্রুপের ম্যাচ শেষে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা বললেন, ‘পয়েন্ট পেয়ে খুশি। তবে আরও উচ্চাভিলাষী হতে হবে। নিজেদের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে, আরও বড় লক্ষ্য স্থির করতে হবে।’ সেদিনের নায়ক মোরসালিনও আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন না, ‘আমার গোলে ড্র করে মাঠ ছেড়েছি, খুব ভালো লাগছে। যদিও লক্ষ্য ড্র ছিল না, জিততে চেয়েছিলাম। এরপরও এক পয়েন্ট পেয়েছি। সামনের ম্যাচগুলোতে জয়ের জন্যই খেলব।’
সামনের ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষ যদিও বেশ কঠিন। কিন্তু যদি বিশ্বাস থাকে তাহলে অসম্ভব কিছু কি আছে! মোরসালিনদের হুংকারে নবজন্ম হোক ফুটবলের, ফিরুক হারানো দিনের মধুর সুর।