প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:১৫ এএম
বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের এই পোস্টারবয় বিশ্বকাপের আগে দিয়েছিলেন মন খারাপ করা খবর। নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন দেশের ক্রিকেটাঙ্গনকে। জানিয়েছিলেন বৈশ্বিক আসর শেষেই নেতৃত্ব ছেড়ে দেবেন। তবে আশার কথা- দেশের হয়ে সব ফরম্যাটেই খেলতে চান সাকিব। আর বিসিবি জানিয়েছে, ক্রিকেটের সব ফরম্যাটেই বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব।
বিশ্বকাপের আগে একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব জানিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলেই এক দিনের ক্রিকেটকে গুডবাই বলে দেবেন। আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নেবেন ২০২৪ বিশ্ব আসরের পর। ঘোষণাটা ছিল অনানুষ্ঠানিক। বিসিবিকে তেমন কিছু কখনও জানাননি তিনি। তবে সন্দেহ নেই, সাকিবের এ ঘোষণায় বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিল বোর্ড।
বিশ্বমঞ্চে সাকিবের অনুপস্থিতিতে দুটি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ওয়ানডে ক্রিকেটের মহাযজ্ঞ শেষে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও তিনি অধিনায়কত্ব করেন। সামনে কিউইদের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দেবেন ইনফর্ম শান্ত। তাই ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসেবে এ তরুণ তুর্কিতেই দেখছিলেন অনেকে। তবে আপদকালীন অধিনায়ক শান্তর নিয়মিত অধিনায়ক হওয়ার অপেক্ষাটা বেড়েই গেল সাকিবের নতুন ঘোষণায়।
বিশ্বকাপ থেকে ফিরে সাকিব নাম লিখিয়েছেন রাজনীতিতে। অংশ নিচ্ছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। রাজনীতির ময়দানের ব্যস্ততার মাঝেও ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যেতে চান। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে সাকিব জানিয়ে দেন, দেশের ক্রিকেটের জন্য ছেড়ে দেবেন বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলার সুযোগ। আইপিএল থেকে নিজেকে আগেই গুটিয়ে নিয়েছেন। নিলামে নামই জমা দেননি। তার ভাষায়, ‘আগে যে ফ্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোতে খেলতাম, হয়তো এগুলো আমি স্যাক্রিফাইস করব। তিনটি সংস্করণেই খেলছি। ইচ্ছা আছে আরও অনেক দিন ক্রিকেট খেলে যাওয়ার।’
বাঁ-হাতের তর্জনীতে চোট আর রাজনীতিতে ব্যস্তততার কারণে ক্রিকেট মাঠে না থাকলেও কাগজে-কলমে এখনও বাংলাদেশের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিবই। আর সাকিব খেলা চালিয়ে যেতে চাওয়ায় নতুন অধিনায়ক বাছাইয়ের ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে বিসিবি। গতকাল মিরপুরে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেন, ‘এখানে আসলে (অধিনায়কত্ব নিয়ে) নতুন করে ভাবনার কিছু আসে না। সে (সাকিব) এখনও আমাদের অধিনায়ক। এখন আমরা শান্তকে দায়িত্ব দিয়েছি। শান্তকে আমরা বলেছি যে, সামনের দুটি সিরিজ আছে, সেজন্য তাকে অধিনায়কত্ব দিয়েছি। সাকিবকে একটা লম্বা সময়ের জন্য অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়েছে। সাকিব ফিরলে আমরা ধরে নিচ্ছি সে-ই অধিনায়ক। এখন সামনে সে অধিনায়ক থাকবে কি না- এরকম কোনো প্রশ্ন ওঠেনি।’
সাকিব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ছাড়তে চাওয়ায় স্বস্তি বইয়ে যাচ্ছে বিসিবিতে। কেননা বিদেশি লিগে তার খেলা নিয়ে অনেকবারই ঝামেলা পোহাতে হয়েছে বোর্ডকে। জাতীয় দলে সাকিবকে পেতে বেগ পেতে হয়েছে। জালাল ইউনুস জানান, ‘ওর (সাকিব) কথা মিডিয়াতে দেখেছি। এটা আনন্দের ব্যাপার। এখন সে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট থেকে দেশের ক্রিকেটের ওপর বেশি মনোযোগ দেবে। এটা আমাদের জন্য বড় একটা স্বস্তির খবর। আমরা চাই, যত সংস্করণ আছে, সে আমাদের দেশের জন্য খেলুক।’
বছর শেষ হতে যাচ্ছে। এজন্য আলোচনা আছে তামিম ইকবালের কেন্দ্রীয় চুক্তি নিয়ে। দেশসেরা এ ওপেনারের চুক্তির বিষয়ে জানুয়ারিতে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ নিয়ে বিসিবির এই সিনিয়র পরিচালকের ভাষ্য, ‘আমরা অপেক্ষা করেছি, যেহেতু বিষয়গুলো আগেই মিডিয়াতে দেখেছেন। তামিম কথা বলেছে, মাননীয় সভাপতিও (নাজমুল হাসান পাপন) বলেছেন। তার সঙ্গে একটা মিটিং হয়েছে। এর মধ্যে তামিমের ভবিষ্যতের ক্রিকেট পরিকল্পনা নিয়ে কী আলাপ-আলোচনা হয়েছে আমি জানি না। তার থেকে জানতে হবে সামনে তার কমিটমেন্ট কী। এটার ওপর ভিত্তি করে চুক্তির কথা চিন্তা করতে হবে। যা আমরা জানুয়ারি মাসেই জানতে পারব। ভবিষ্যতে তার কী কমিটমেন্ট, নিজের কী পরিকল্পনা- সেটা জানার ওপর নির্ভর করছে আমরা তাকে কীভাবে চুক্তিতে নেব।’ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের টি-টোয়েন্টিতে ফেরা নিয়ে তিনি জানান, ‘এটা বেইজড অন পারফরম্যান্স, যদি সে পারফর্ম করতে পারে অবশ্যই টি-টোয়েন্টিতে থাকবে। মাঠের পারফরম্যান্স যদি তার পক্ষে বলে তাহলে কেন নয়, অবশ্যই সে ফিরবে।’
২০২৭ সালে টেস্ট সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু সিরিজটি ২০২৬ সালে এগিয়ে আনতে চায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। জালাল ইউনুস বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া কিছু জানায়নি। আমরা জানি, ২০২৭ সালে আমরা তাদের ওখানে সফর করব। আলোচনা এখনও ওই অবস্থাতেই আছে। খবরটা আমরাও দেখেছি, এর পেছনে কারণ হিসেবে মনে হয়েছে- তাদের ১৫০ বছরের একটা সেলিব্রেশন আছে টেস্টে। হয়তো সেটার সঙ্গে এই সিরিজও তারা অ্যাডজাস্ট করতে চায়। যেটাই হোক, আমরা চাইব সঠিক সময়ে উপযুক্ত ভেন্যুতে যেন খেলতে পারি।’