বাবার চোখে শিবলী
হেলাল নিরব
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৫৮ পিএম
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৫৫ এএম
শিবলীর সাফল্যের নেপথ্যের নায়ক বড় ভাই মোহাম্মদ আশরাফুল আলম আসিফ। প্রবা ফটো
খুব গড়িমসি করলেন মোহাম্মদ আবুল বাসার। যুব এশিয়া কাপ জয়ের অন্যতম রূপকার আশিকুর রহমান শিবলীর বাবা। প্রথমে ফোনকলে কিছুতেই কথা বলতে চাচ্ছিলেন না। মেজ ছেলে মোহাম্মদ আশরাফুল আলম আসিফকে খুঁজতেও শুরু করলেন। তবে মত বদলে ফেললেন সহসাই। দরাজ গলায় সরকারি চাকুরে থেকে অবসরে যাওয়া আবুল বাসার বললেন, ‘আমার ছেলের নাম আশিকুর রহমান শিবলী। ও ক্রিকেট খেলে।’ কণ্ঠে নতুন উদ্যম। তারপর এক দুই করে একটানা মিনিট দশেক বলে গেলেন কথা। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন ছেলের অনেক গল্পই উঠে এলো তাতে।
শিবলীর বাবা পরিচয়ে বাসার সাহেব এখন ভীষণ গর্বিত। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেটাই শোনালেন বেশ কবার। খুব কাছের মানুষটাকেও আগে ছেলের ক্রিকেট খেলার কথা বলতে চাইতেন না। যুব এশিয়া কাপে শিবলীর দুর্দান্ত পারফর্মের পর সেই বাঁধ ভেঙেছে। মরুর দেশে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে শিবলী ছিলেন শুরুর সারির নায়ক, ৫ ম্যাচে ১২৬ গড়ে করেছেন ৩৭৮ রান। ছিল দুটি করে ফিফটি ও সেঞ্চুরি। বাবার সবকিছু আছে নখদর্পণে।
ছোটবেলা থেকেই শিবলী কথা বলেন কম, নিজের কাজের প্রতিই বেশি মনোযোগী। লম্বা গল্পে আবুল বাসার জানালেন, মাঠ এবং ঘর— এর বাইরে শিবলীর দুনিয়াটা খুব একটা বড় ছিল না। বাংলাদেশকে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট এনে দেওয়া শিবলী আরব আমিরাতে থাকতেই বাবাকে কল করেছিলেন।
শিবলীর বাবা শুনিয়েছেন বাবা-ছেলের সেই গল্প— ও ছোটবেলা থেকে কথা কম বলত। আমরা এটা নিয়ে খুব বিরক্ত ছিলাম। আমার সঙ্গে, ভাইদের সঙ্গে, এমনকি ওর মায়ের সঙ্গেও কথা কম বলত। মাঠ আর বাসা, মহল্লার লোকও ওরে চেনে না তেমন। আমাকে বলত, ‘আমি যা করব তা ভালোই করব। যা করি না কেন দেখাই দেব, ভালো করেছি।’ আমি বলতাম, ‘আমি রেজাল্ট দেখতে চাই, বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’ আবুধাবি থাকতে সেদিন আমাকে ফোন করে বলেছে, ‘বাবা তোমাকে বলছিলাম, আল্লাহ চাইলে আমি বাস্তবায়ন করে দেখাব। আশা করি তোমরা খুশি হইছ।’
ছোট ছেলের বড় অর্জনে বাবার বুকের ছাতিও বেড়ে গেছে। বাজারঘাটে এখন আবুল বাসারের বদলে শিবলীর বাবা পরিচয়টা বড় হয়ে উঠেছে, ‘ছেলের অর্জনে আমি সত্যিই গর্বিত। আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করছে। আজ বিকালেও একজন জিজ্ঞেস করেছে। গতকাল বাজারে গেছি পেছনে কয়েকজন বলছিল, সেই ছেলের বাবা হচ্ছেন উনি। আমি প্রথমে বুঝতে পারি নাই। তা ছাড়া আমার ছেলে তো এমন কিছু করবেও না যে পেছন থেকে কেউ কথা বলবে। পরে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, এশিয়া কাপে শিবলী দারুণ খেলেছে সেই কথাই বলছে। পুরো বাজারে অন্তত দশজন আমাকে ডেকে ডেকে এমন বলেছে। কেউ অভিমানও করেছে, কেন জানাইনি। তাদের বলেছি, শিবলি কথা কম বলে, ও কাজে বিশ্বাসী। এখন আপনারা জানছেন। ইনশাআল্লাহ সামনে আরও জানতে পারবেন।’
মুখে কম বলা শিবলী ব্যাট হাতে আরব মুলুকে দাপট দেখিয়েছেন। এরপর সামনে কতদূর, যুব বিশ্বকাপ, জাতীয় দল, তারপর... আবুল বাসার অতটা ভাবতে চান না। তার স্রেফ চাওয়া- ছেলে দেশের হয়ে দারুণ কিছু আনুক, ‘শিবলী যে অবস্থায় আছে ও খুব দ্রুত এগোবে। আমরা তার জন্য দোয়া করি। ওর মায়ের কথা আলাদা করে বলতে হয়। জানেন তো, বন্দুকের গুলি মিস হবে, মায়ের দোয়া মিস হবে না। সে তাহাজ্জুদ পরে, নামাজ পড়ে দোয়া করে। তারপর ওর শিক্ষাগুরু ওর ভাই আসিফ। বাংলাদেশের টপ লেভেল যতদূর আছে সবটুকু যেন ও উঠতে পারে, সেই দোয়া করি।’
মেন্টর হিসেবে থাকা ভাই আসিফের কণ্ঠেও একই সুর, ‘শিবলী ওর কাজের প্রতি খুব সচেষ্ট। একটা জিনিস দেখিয়ে দিলে সেটাই করে। আশা করি অনেক দূর যাবে।’
এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন শিবলীদের এবার যুবা বিশ্বকাপের চ্যালেঞ্জ। আরেকটু বড় বটে। সেই লক্ষ্যে খুব বেশি সময়ও হাতে নেই। কদিনের যা ফুরসত তাতেই বুধবার ফরিদপুরে নিজেদের বাড়িতে যাবেন শিবলী। ফেরার পর আবার ব্যস্ততা।
শিবলীর অনেকটা পথ যে হাঁটা বাকি, জিরোবার সময় কই!