× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যে সিদ্ধান্তে জেগে উঠেছিল বার্সেলোনা

রুবেল রেহান

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৪ পিএম

ছবিতে বা থেকে, হুয়ান লাপোর্তা, হুয়ান ক্রুইফ, পেপ গার্দিওলা, হোসে মরিনহো। ছবি : সংগৃহীত

ছবিতে বা থেকে, হুয়ান লাপোর্তা, হুয়ান ক্রুইফ, পেপ গার্দিওলা, হোসে মরিনহো। ছবি : সংগৃহীত

১৯৯৮ সাল, হলিউডের গিনেথ প্যালট্রোর অভিনীত সিনেমা স্লাইডিং ডোরস বেশ জনপ্রিয়তা পায় সে সময়। ছবিটির নামকরণে ব্যবহৃত দুটি শব্দ নতুন করে যুক্ত হয় ডিকশনারিতে। ১০ বছর পর ‘স্লাইডিং ডোরস’ শব্দযুগলকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে ফুটবল। ২০০৮ সালে ডাচ কিংবদন্তি ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বার্সেলোনা মুখ থুবড়ে পড়ে। পতনের শেষ সীমায় পৌঁছে যায় কাতালুনিয়ারা। 

পরপর দুটি ট্রফিহীন মৌসুম কাটায় বার্সেলোনা। লিগে সেবার তৃতীয় স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করে বার্সা। এর চেয়েও বড় কথা সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গিয়ে লজ্জায় ডোবে বার্সেলোনা। লিগের শেষ ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হয় বার্সা। ওই ম্যাচের আগেই লা লিগা শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলে লস ব্লাঙ্কোসরা। মাঠে নামার আগে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের গার্ড অব অনার দিতে হয় অতিথি শিবিরের ফুটবলারদের। বিব্রত পরিস্থিতি সেখানেই থেমে থাকেনি। খেলায় রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪-১ গোলে হারে বার্সেলোনা। কিন্তু মাদ্রিদ সমর্থকরা চাপে থাকা হুয়ান লাপোর্তাকে অপমান করে স্লোগান তোলে ‘লাপোর্তা প্লিজ স্টে’ বলে। বার্সার যখন মাঠে এমন অবস্থা, সেই সময়ে খেলায় মন দেওয়ার চেয়ে নাইট ক্লাবগুলোতে মগ্ন ছিলেন তাদের কাণ্ডারি রোনালদিনহো।

২০০৭-২০০৮ মৌুসমে লা লিগায় দ্বিতীয় দেখায় রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪-১ গোলে হারে বার্সেলোনা। 

দলের শৃঙ্খলা এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল যে কোনোভাবেই রোনালদিনহোকে খেলায় মনোযোগ দেওয়াতে পারছিল না বার্সা। ব্রাজিলিয়ান তারকাকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল একের পর এক নেতিবাচক খবর। সেই সময়ে নাইট ক্লাবে তার ঘুমিয়ে পড়ার কিছু ছবি প্রকাশ্যে আসে। প্রশ্ন তোলা হয় তার ওজন বৃদ্ধি নিয়েও। আর সব কিছুর জন্য দায়ী করা হচ্ছিল কোচ রাইকার্ডকে। মাদ্রিদের সমর্থকদের করা অপমানের ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তাকে বরখাস্ত করে বার্সা।

রাইকার্ডের স্থলাভিষিক্ত হবেন কে?

কোচ নিয়োগের সিদ্ধান্তে সবার আগে নাম আসে হোসে মরিনহোর। পূর্বে ববি রবসন এবং লুই ফন গালের সঙ্গে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে কাজের সুবাদে বার্সার সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি হয় মরিনহোর। সেই সময়ে এফসি পোর্তোর হয় উয়েফা কাপ এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়; এ ছাড়া চেলসির হয়ে অভূতপূর্ব দুটি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয় তাকে নিয়ে আসে হেভিওয়েট কোচের তালিকায়। তবে ‘এ’ তালিকাভুক্ত ফুটবল তারকা বেছে নেওয়ার পরিবর্তে বার্সেলোনা ‘বি’ তালিকা থেকে কাউকে বেছে নিতে পারে, ভাবা হচ্ছিল এমটাই। 

একটি সিদ্ধান্ত : মরিনহো নয়, গার্দিওলা

বার্সেলোনা তাদের ‘বি’ দলের কোচকে সিনিয়র দলের ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেয়। ২০০৭ সালে বার্সেলোনার ‘বি’ টিমের ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া পেপ গার্দিওলাকে পরের বছর অর্থাৎ ২০০৮ সালে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে নিয়োগ দেন হুয়ান লাপোর্তা। কেন এই সিদ্ধান্ত? প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই মনে আসতে পারে। মরিনহোর মতো কাউকে না নিয়ে অনভিজ্ঞ একজন কোচকে কেন নিয়োগ দিল বার্সেলোনা। যার এর আগে সিনিয়র পর্যায়ে কখনও কোচিংয়ের অভিজ্ঞতাই ছিল না। সেই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে হলে আগে আপনাকে বার্সেলোনার আরও গভীরে যেতে হবে। বাস্তবতা নয়, স্বপ্ন আর আবেগ দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। বার্সা এমন একজনকে চেয়েছিল যার মধ্যে প্রেরণা ছিল, পদ্ধতি, নিজস্ব মতামত ছিল। আর এসব বিবেচনাতেই গার্দিওলাকে নিয়োগ দেয় বার্সা। যেই একটি সিদ্ধান্ত বদলে দেয় বার্সাকে।

সেই সময় বিবিসি একটি ধারাবাহিত ডকুমেন্টারি প্রকাশ করে গার্দিওলাকে নিয়ে। যার হেডলাইন ছিল ‘পেপ গার্দিওলা : চেসিং পারফেকশন’ নামে। সেখানে বলা হয় গার্দিওলাকে বুঝতে হলে ইয়োহান ক্রুইফকে বুঝতে হবে। 

ক্রুইফ ছিলেন বার্সেলোনার সমর্থক। খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৭৪ সালে লা লিগা এবং ১৯৭৮ সালে কোপা দেল রে, ইউরোপিয়ান কাপসহ টানা চারটি শীর্ষ শিরোপা জিতে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বার্সাকে কোচিং করান তিনি। আর গার্দিওলার ক্যারিয়ারেও ক্রুইফের প্রভাব ছিল ব্যাপক। 

খেলা থেকে অবসর নেওয়ার পর দারুণ কিছু প্রস্তাব সত্ত্বেও বার্সেলোনার ‘বি’ টিম কোচ হওয়ার প্রস্তাবে রাজি হন গার্দিওলা।  ছবি : রয়টার্স

১৯ বছর বয়সি গার্দিওলাকে ১৯৯০ সালে রিজার্ভ থেকে বার্সেলোনা দলে নিয়ে আসেন ক্রুইফ। সেই সময়ে মাইকেল লিয়ান্দ্রো, রোনাল্ড কোম্যান নিয়ে গড়া বার্সেলোনার তারকাসমৃদ্ধ দলে সুযোগ দেন গার্দিওলাকে। তার মধ্যে বিশেষ কিছু দেখেছিলেন ক্রুইফ, যা আর কেউ দেখেনি বা তাকে নিয়ে ভাবেনি। স্প্যানিশ সাংবাদিক লু মার্টিন বোধকরি গার্দিওলাকে সবচেয়ে ভালো চিনতেন। ২০০১ সালে প্রকাশিত তার স্বল্প পরিচিত বই ‘লা মেভা জেন্ট, এল মিউ ফুটবল’ (মাই পিপল, মাই ফুটবল) লিখেছিলেন। কাতালুনিয়ায় আমরা বলি সেনি এবং রউক্সা। তখনকার বার্সার ডিফেন্ডার অধিনায়ক কার্লোস পুয়োলকে রউক্সা (আবেগ) হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন মার্টিন। আর তার মতে সেই দলের সেনি (মস্তিষ্ক) ছিলেন পেপ। সে দলে বুদ্ধি এনেছিল, সে বুঝতে পারত ক্রুইফ তার কাছে কী চান? এই ডাচ কিংবদন্তিকে নিয়ে বলা হতো তার দুই ছেলেÑ একজন বাই বর্ন জর্ডি এবং অন্যজন ক্রীড়াপুত্র পেপ। পরবর্তী সময়ে জর্ডি ক্রুইফও মার্টিনের সঙ্গে একমত হয়েছেন। বাবার সঙ্গে পেপের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তিনি সামনে এনেছিলেন। গার্দিওলার ওপর তার বাবার ভীষণরকম আস্থা ছিল বলে সে সময়ে সংবাদমাধ্যমে স্বীকার করেছিলেন জর্ডি। ২০০৬ সালে গার্দিওলা অবসরে যাওয়ার পর জর্ডি একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘পেপের প্রতি বাবার অনেক বেশি যোগাযোগ ছিল। এমনকি বাবা সম্ভবত এটাও গভীরভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে ভবিষ্যতের জন্য দারুণ একজন কোচ হতে যাচ্ছেন পেপ।’ 

যদিও গার্দিওলাকে নিয়ে সমালোচনা হয়। তিনি বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ এবং ম্যানচেস্টার সিটির মতো শীর্ষ পর্যায়ের বড় বাজেটের দলের কোচ হিসেবে সাফল্য পেয়েছেন। তাকে নিয়ে অনেকের ধারণা ছোট কোনো দল নিয়ে তিনি কখনও জাদু দেখাতে পারতেন না। কিন্তু এটাও তো সত্য যে, বার্সেলোনা কোনো ছোট দলও তো হতে পারে না। কোচ হিসেবে নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে, যখন তার বয়স কেবল ৩৭, গার্দিওলা বলেছিলেনÑ ‘হ্যাঁ, আমি একজন খেলোয়াড় ছিলাম, কিন্তু একজন কোচ হিসেবে আমি একদম শূন্য থেকে শুরু করব।’ তবে এটা আকস্মিক ছিল যে তিনি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও একটি ‘বি’ টিমের ম্যানেজার হতে সম্মতি দিয়েছিলেন। সেবার গার্দিওলার মতো বার্সেলোনা ‘বি’ টিমও শুরু করেছিল একদম শূন্য থেকে। আগের মৌসুমে শেষ ১০ ম্যাচে জিততে না পারায় অবনমন হয়েছিল তাদের।

গার্দিওলার দায়িত্বে ২০০৭ সালে বার্সা ‘বি’ টিমের প্রথম ম্যাচটি ছিল প্রাক মৌসুম প্রীতি ম্যাচ। একটি ছোট এবং কৃত্রিম পিচে বানোয়ালেসের বিপক্ষে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর মূলপর্বে বার্সেলোনা ‘বি’ তাদের প্রথম তিন ম্যাচের একটিতে জয় নিশ্চিত করে। 

অবনমন হওয়া মানরেসার বিপক্ষে ২-০ গোলে হারের পর গার্দিওলা তার বিশ্বাসের প্রথম পরীক্ষায় পড়েন। তার স্টাইল ছিল পিচে পজিশনের চেয়ে বল দখলকে প্রাধান্য দেওয়া। সেটি বিফলে যায়। ম্যাচ হারার পরের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে গার্দিওলা বলেছিলেন, ‘আমি বলেছিলাম খেলায় আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ মাঠ এত ছোট ছিল যে কারণে আমি অমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। আমরা যদি জিততে চাই তবে এ ধরনের পিচে এবং বড় দল ও খেলোয়াড়দের বিপক্ষেও আমরা জিততে পারব। তবে পরিবর্তন আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমি অভিজ্ঞ ছিলাম না। বয়স ৩৭, কখনও বড় খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ করাইনি। আমার নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।’

সাত বছরের ব্যবধানে বার্সেলোনার খেলোয়াড় থেকে দলের কোচ হয়ে যান গার্দিওলা। ছবি : এক্স

ওই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যে ডমিনিক টরেন্টকে তলব করেন গার্দিওলা। যখন তিনি জিরোনার প্রধান কোচ। কিন্তু গার্দিওলার ডাকে প্রধান কোচের দায়িত্ব ছেড়ে তার সহকারী হয়ে যান টরেন্ট। ২০১৮ সালে ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে নিউইয়র্ক সিটি এফসিতে প্রধান কোচের দায়িত্ব পালনের আগে গার্দিওলার সহকারী হিসেবে ১১ বছর কাটিয়েছিলেন তিনি। তাকে নিয়ে একবার এক সাক্ষাৎকারে টরেন্ট বলেছিলেন, ‘আমি সব সময় বলি পেপের প্রলোভন দেখানোর দারুণ ক্ষমতা রয়েছে। সে এমন একজন যে প্রতিদিন খেলোয়াড়দের দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারে। সে সবকিছু, এমনকি সবার সম্পর্কে দ্রুত শিখতে পারে। সবাইকে চিনতে পারে। অল্প দিনেই সে বার্সেলোনা ‘বি’ দলকে একটা কমপ্যাক্ট দলে পরিণত করে। তিনি খেলোয়াড়দের থেকে যা চান সেটি দ্রুত বোঝাতে পেরেছিলেন। এক কথায় সে একজন স্পঞ্জ। আমরা একসঙ্গে দারুণ একটি স্কোয়াড গঠন করেছিলাম।’

সার্জিও বুসকেটস, পেদ্রো রদ্রিগেজ, থিয়াগো আলকানতারা সেই দলের নতুন মুখ ছিলেন। আর তাদের চালিকাশক্তি হিসেবে সার্বক্ষণিক ছিলেন গার্দিওলা। তার কোচিংয়ে শুরু থেকেই পেশাদারত্ব ছিল সর্বাগ্রে। সে ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষ দলের ভিডিও জোগাড় করে বিশ্লেষণ ছাড়া নতুন নতুন এমন কিছু করত, যা ওই পর্যায়ের ফুটবলে তখন নাকি শোনা যেত না। খেলোয়াড়দের জন্য রাত ১১টার পর কারফিউ জারি করতেন বলেও শোনা গেছে। সেই সময়ে তার দলের অধিনায়ক মার্ক ভালিয়েন্তে একবার বলেছিলেন, খেলোয়াড়দের জন্য তার পরিষ্কার সীমা নির্ধারণ করা ছিল। খেলার সঙ্গে অসঙ্গতি এমন কিছু কাউকে কখনও করতে দেননি তিনি। নিয়মের দিক থেকে তার কিছু কোড ছিল। নিয়ম না মানলে জরিমানাও গুনতে হতো আমাদের। যদিও এটিকে মোটেও অন্যায্য বলে কারও কাছে মনে হয়নি।’

১৯৯৭ সালে ইউরোপিয়ান কাপ জেতে বার্সেলোনা। ছবিতে (বা থেকে) মরিনহো, ববি রবসন, রোনালদো। ছবি : রয়টার্স

বার্সেলোনার তৎকালীন স্পোর্টিং ডিরেক্টর জিকি বেগিরিস্টেইন যিনি এখন ম্যানচেস্টার সিটিতে একই কাজ করছেন, তিনি গার্দিওলার নিখুঁতের বিষয়ে স্মরণ করে বলেছিলেন, ‘লিগ টুতে পেপ এমনভাবে কাজ করছিল যেন সে বার্সেলোনার প্রথম দলের দায়িত্বে ছিল। খেলোয়াড়দের দেখাশোনা করা, খাবার, ভ্রমণ করা, ম্যাচ রেকর্ড করা ইত্যাদি সব কাজই সে করত। সে সত্যিই আশ্চর্যজনক ছিল। সেই সময়ে আমাকে একদিন বলেছিলÑ আমি একদিন অবশ্যই প্রথম দলের কোচ হব। কী অবিশ্বাস্য আর পাগলামিÑ সেটি সে পরের বছরই করতে পেরেছিল।’

শুরুটা ভালো না হলেও গার্দিওলার সেই ‘বি’ টিম জয়ের পথে নাটকীয় উন্নতি করে। সেই সময়ে ফেডারেশনের মন জয় করেছিলেন গার্দিওলা। বিশেষ করে কিছু নতুন মুখ এনে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। টরেন্টর ভাষায়, ইয়োহান ক্রুইফ তার স্ত্রীকে নিয়ে বার্সেলোনা ‘বি’ দলের একটি খেলা দেখতে গিয়েছিল। আমি লক্ষ করলাম ক্রুইফ খেলা দেখা বাদ দিয়ে সে পেপের দিকে তাকিয়ে থেকেছে। সে কীভাবে পরিচালনা করছে, ডাগআউটে তার শরীরী ভাষা কেমন ছিল, তার চলাফেরা, আচরণ সবকিছুই নজরে রেখেছিল ক্রুইফ। আমার মনে আছে, ম্যাচ শেষে যখন পেপের সঙ্গে আমার দেখা হয়, তখন ওকে আমি বলেছিলাম যে তোমাকে দ্বিতীয়বার পরখ করতেই ইয়োহান এসেছিল। সে খেলা নয়, তোমাকে দেখতে এসেছিল। সেবার অবশ্য পেপের অনেক টাকা খরচ হয়েছিল। কেননা সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, দল টানা তিন ম্যাচ জিতলে সবাইকে লাঞ্চ করাবে। আর তেমন ঘটনা পাঁচবার ঘটেছে।’

গার্দিওলার সঙ্গে ক্রুইফের সম্পর্ক ছিল দারুণ। ছবি : এক্স

ওই মৌসুমের পর প্রধান দলের জন্য কোচ খুঁজছিল বার্সেলোনা। ২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার কোষাধ্যক্ষ ও বোর্ড সদস্য হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সালা-ই-মার্টিন। তিনি একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এটা সবাই জানত যে আমরা একটা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। বিশেষ করে রোনালদিনহোকে নিয়ে। তাকে সামলানোর মতো কাউকে খুঁজছিলাম। কিন্তু সেটা কে হবেন। বোর্ড মিটিংয়ে তখন দুজনের নাম উঠে আসে। একজন মরিনহো, অন্যজন গার্দিওলা। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ জেনারেল কে? বোর্ড মিটিংয়ে একবাক্যে সবাই উচ্চারণ করছিলেন মরিনহোর কথা। কিন্তু সমস্যা বাধে অন্যখানে। বার্সেলোনা যে মনন, মগজ আর মেজাজে খেলে সেটির সঙ্গে কোনোভাবেই মেলানো যাচ্ছিল না তাকে। এটি একমাত্র পেপের মধ্যেই রয়েছে বলে সবাই স্বীকার করে নেন অবশেষে। 

ওই সময় মরিনহো ছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা কোচ। বার্সার বোর্ড মিটিংয়ে বলা হয়, আমরা ডাচ ধাঁচের ফুটবল খেলে জিতব। এদিকে হুয়ান লাপোর্তা বলে ওঠেন, আমরা মরিনহোকে নিতে পারি না। কাউন্টার অ্যাটাকে তিনি অতি রক্ষণাত্মক। এভাবে আমরা খেলি না। তাছাড়া তিনি সত্যিকারের ভদ্রলোকও নন। সে যেভাবে ম্যানিপুলেট করে সেটি বার্সেলোনার সঙ্গে যায় না। যদিও ওই মিটিংয়ে বেশিরভাগই মরিনহোর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। তখন ক্রুইফকে ডেকে লাপোর্তা জিজ্ঞেস করেন তোমার কী মনে হয় পেপ প্রস্তুত? ক্রুইফ উত্তর দেন হ্যাঁ।’ 

গার্দিওলা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম মৌসুমেই ট্রেবল জেতে বার্সেলোনা। ছবি : সংগৃহীত

এরপর একজন চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা কোচকে রেখে দ্বিতীয় সারির (!) দলের কোচকে নিয়োগ দেয় বার্সেলোনা। তারপর যা হলো সেটি ইতিহাস। চলতি মৌসুমে বার্সেলোনা ফের কোচ সংকটে পড়তে যাচ্ছে। দলটির সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স মোটেও সন্তোষজনক নয়। লিগ শিরোপায় অনেকটাই পিছিয়ে দলটি। এমন অবস্থায় মৌসুম শেষে দায়িত্ব ছাড়ার কথা জানিয়ে রেখেছেন বর্তমান প্রধান কোচ জাভি হার্নান্দেজ। তিনি ছাড়ার পর বার্সার হেডমাস্টার কে হবেন, এটাই এখন টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড। লাপোর্তা কি পারবেন সিদ্ধান্তে আবার নতুনত্ব আনতে। ফিরবে কি বার্সেলোনার সেই সোনালি দিন?

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা