অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:২৬ পিএম
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৩৭ পিএম
বল হাতে পাকিস্তানকে অল্পতেই গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের যুবারা। তাই প্রথম ইনিংস শেষের পর বাংলাদেশ হারবে, এমন বাজি ধরার লোক খুব কমই ছিলেন। এমনকি পাকিস্তানের খেলোয়াড়রাও হয়ত বিশ্বাস করতে পারেননি নিজেদের এমন ভাগ্যের কথা। তবে বোলিংয়ে চার উইকেট শিকারের পর ব্যাট হাতে শেষ পর্যন্ত একাই লড়াই করলেন রোহানাত দৌল্লা বর্ষণ। কিন্তু অপর প্রান্তে কেউই তাকে সঙ্গ দিতে পারলেন না। তাতেই মাত্র ৫ রানের পরাজয়ে চলতি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের একদম কাছ থেকে বিদায় নিলো লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
আজ শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দক্ষিণ আফ্রিকার বেনোনিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ম্যাচে টস জিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি। এরপর রোহানাত দৌল্লা বর্ষণ ও শেখ পারভেজ জীবনের বোলিংয়ের কাছে অসহায় পাকিস্তানি যুবারা মাত্র ১৫৫ রানে গুঁটিয়ে যায়। সেমিতে যেতে ৩৮ ওভারে ম্যাচ শেষ করতে হতো বাংলাদেশকে। কিন্তু নির্ধারিত সেই ওভার তো বটেই, পুরো ম্যাচটাই বাংলাদেশের জেতা হলো না। লক্ষ্য অতিক্রম করতে গিয়ে জুনিয়র টাইগাররা অলআউট হয়েছে ১৫০ রানে।
পাকিস্তানের শুরুটা যদিও খারাপ ছিল না। শামিল হুসেন ও শাহজাইব খানের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৩৭ রান। এরপর রহনত দৌলার বর্ষণের আঘাত। শামিলকে স্রেফ বোকা বানান তিনি। স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে যাওয়া বলটি ছেড়ে দিয়েছিলেন শামিল। কিন্তু বিধিবাম! গতির সঙ্গে বাঁক নিয়ে জুনিয়র টাইগারের বল ভেঙে দেয় স্ট্যাম্প। শামিলকে ফেরানোর পর আরও তিন ব্যাটারকে ফেরান বর্ষণ। ঝুলিতে পুরে নেন টপ অর্ডারের তিন ব্যাটার এবং টেলএন্ডারে হুমকি হয়ে ওঠা মোহাম্মদ জিসানের উইকেট। ইনিংস শেষে রহনত দৌলা বর্ষণের বোলিং স্ট্যাটস এমন— ৮-১-২৪-৪। ব্যাটিংয়ে দল যখন ধুঁকছে তখন বর্ষণ আশা জাগিয়েছিলেন। শেষদিকে তার ২৪ বলের ২১ রানের ইনিংস বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ১৫০ রান আনলেও হার রুখতে পারেনি।
টস
হেরে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানের হাসফাসও শুরু করেন বর্ষণ। তারসঙ্গে পরে যোগ দেন অফ
স্পিনার শেখ পারভেজ। পাকিস্তানের রান ৮৯ হতেই নেই ৬ উইকেট। পাকিস্তানের ইনিংসের সবচেয়ে
বড় জুটিটা হয় এরপরই। সপ্তম উইকেটে ৪৩ রান যোগ করেন আরাফাত মিনহাস ও আলী আসফান্দ। ৩৬তম
ওভারে আসফান্দকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন পারভেজ। পরের ওভারে উবায়েদ শাহকে বোল্ড করে চতুর্থ
উইকেট পেয়ে যান পারভেজ। রোহনাতও নিজের চতুর্থ উইকেট নিতে দেরি করেননি। সেই সময় কালক্ষেপণ
করেননি ইয়ান বিশপ। বেনোনিতে পাকিস্তানের ব্যাটিং ইনিংস শেষ হতে না হতেই টুইট, ‘এই তরুণরা
অসম্ভব শক্তিশালী এবং দক্ষÑ ওরা কাউকে ভয় পায় না।’ ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি টুইটারে মেতেছিলেন টাইগার পেসারদের প্রশংসায়।
বিশপের কণ্ঠে এমনিতেও বাংলাদেশের স্তুতি ঝরে। কিন্তু চলতি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে জুনিয়র
টাইগারদের পারফরম্যান্সকে যদি দাঁড়িপাল্লায় আনেন তবে বিশপের কথাটাই বহুলাংশে সঠিক।
প্রায় প্রতি ম্যাচে কঠিন সমীকরণের সামনে দাঁড়ানো মাহফুজুর রহমান রাব্বির তুরুপের তাস
হয়েছেন এই পেসাররা। পেস তোপে পাকিস্তান অল্পতে বাধা পরলেও বাংলাদেশের যুবারা ব্যাটিংয়ে
বাকি কাজ সামলাতে পারেননি।
ছোট
রানের জবাবে নিজেদের উত্তেজনা ধরে রাখতে পারেনি জুনিয়র টাইগাররা। ইনিংস শুরুর ২.৪ ওভারের
মাথায় ২৬ রান তুলে ফেলেছিলেন দুই ওপেনার। কিন্তু ব্যক্তিগত ৪ রান করে আরেকবার আসরে
ব্যর্থ হন এশিয়া কাপের সেরা ব্যোটার আশিকুর রহমান শিবলী। ১২ বলে ১৯ রান করে জিসান আলমও
বেশি সময় থাকতে পারেননি। তিনে নামা মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে আসে ২০ রান। এরপর থেকে
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। টপ অর্ডারের পর মিডল অর্ডারও ব্যর্থ হন।
২৬ রানে প্রথম উইকেট হারানো দল দলীয় ৫০ রানের আগে হারায় তিন টপ অর্ডারকে। এরপর শতরান
তোলার আগেই হারান আরও তিন ব্যাটারকে। উবাইদ শাহ ও আলি রেজার গতিতে যখন খাবি খাচ্ছিল
সবাই তখন শিহাব জেমস আশা হয়ে দাড়ান। কিন্তু বেশি সময় তাকেও থাকতে দেয়নি উবাইদ। স্কোরবোর্ডে
১২৩ রানে জেমস (২৬) ফেরার পর একরান পরেই ফেরেন শেষ ভরসা হয়ে থাকা অধিনায়ক মাহফুজুর
রহমান রাব্বি (১৩)। শেষদিকে বর্ষণের ২১ রান হারের শঙ্কায় আশা জাগালেও শেষটায় মারুফ
মৃধা আর সঙ্গ দিতে পারেনি। তীরে এসে তরী ডোবানো বাংলাদেশ দলেরও নিশ্চিত হয় বিদায়।