আবদুল্লাহ আল মাসুম
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫১ এএম
বিপিএলে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল তানজিদ তামিম, তাওহীদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান, শরিফুল ইসলাম (বাম দিক থেকে);
চলতি দশম বিপিএল শেষের পথে। শেষ হয়েছে লিগ পর্ব। আসছে ২ জুন থেকে শুরু হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। মাঝে বাকি তিন মাস। স্বভাবতই এবারের বিপিএলকে ধরা হয়েছিল বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে। কিন্তু লিগ পর্ব শেষে প্রশ্নও জেগেছে, এবারের বিপিএল থেকে বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের কতটা প্রস্তুত করতে পেরেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আসন্ন টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ঘোষিত টাইগার শিবিরে বেশিরভাগ ক্রিকেটারই এবারের আসরে মেলে ধরতে পারেননি নিজেদের।
বিপিএল শুরুর আগে নাজমুল শান্তদের মুখে প্রায়ই একটি কথা ঘুরেছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সারতে চান তারা। তবে আসরজুড়ে আলো ছড়াতে মোটাদাগে ব্যর্থ হয়েছেন টাইগারদের নতুন এই অধিনায়ক। এ সময়ে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের বেশিরভাগেরই পারফরম্যান্স খুব সাদামাটা। মেহেদি হাসান মিরাজ, রনি তালুকদার, শামিম পাটোয়ারী, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদরা নামের প্রতি মোটেও সুবিচার করতে পারেননি। দুয়েকটা ইনিংসে ঝলক দেখানো বাদে ধারাবাহিকতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেনÑলিটন দাস, তানজিদ হাসান তামিম।
পুরো টুর্নামেন্টে তুলনামূলকভাবে ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন পুরোনোরাই। পাল্লা দিয়ে রান করেছেন জাতীয় দলের বাইরে থাকা তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আর চোখের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার পর ব্যাটে-বলে অদম্য হয়ে উঠেছেন সাকিব আল হাসান। তামিমের মতো তিনিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে দলে নাই। দীর্ঘদিন ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন দেখিয়েছেন লড়াকু মানসিকতা। তরুণদের মধ্যে বল হাতে নিয়মিতভাবেই সাফল্য পেয়েছেন পেসার শরিফুল ইসলাম।
এবারের আসরে শরিফুল বল হাতে ধারাবাহিক থাকলেও তার দল দুর্দান্ত ঢাকার জায়গা হয়েছে পয়েন্ট টেবিলের তলানীতে। আসরে প্রথম ম্যাচেই শিকার করেছিলেন হ্যাটট্রিক। ১২ ম্যাচে ২২টি উইকেট শিকার করে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও এই বাঁহাতি পেসার।
গত আসরে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে দুর্দান্ত ছিলেন তাওহীদ হৃদয়। এবার কুমিল্লার হয়ে খেলেছেন বেশ কয়েকটা অসাধারণ ইনিংস। ১২ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিতে ৩৮৩ রান করেছেন তিনি। ব্যাট করেছেন ৩৮-এর বেশি গড় ও প্রায় ১৫০-এর কাছাকাছি স্ট্রাইকরেটে। আছেন বিপিএলের সেরাদের দৌড়ে। কুমিল্লা গ্রুপ পর্ব শেষ করেছে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেরা দল হিসেবে। তবে দুর্দান্ত কিছু ইনিংস খেললেও ধারবাহিকতার অভাব দেখা গেছে তার ব্যাটেও।
ক্রিকেট বিশ্বকাপে তানজিদ তামিম ছিলেন তামিম ইকবালের বিকল্প পছন্দ। ওয়ান ডে বিশ্বকাপে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি এই বাঁহাতি। এবারের বিপিএলে নিয়মিতভাবে রান না পেলেও খেলেছেন বেশ কয়েকটি চটকদার ইনিংস। এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের এই ওপেনার। ১১ ম্যাচে ৩৮২ রান নিয়ে আছেন সেরা ব্যাটারের তালিকার তিনে। দুই ফিফটি আর এক সেঞ্চুরি আছে তার নামের পাশে।
এবারের টুর্নামেন্ট যতই সামনের দিকে গড়াচ্ছে ততই উজ্জ্বল হয়ে উঠছেন দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। চোখের সমস্যার কারণে টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে দুই ম্যাচে ব্যাটই করেননি। আবার তিন ম্যাচে ছিলেন ফ্লপ। কিন্তু এরপরই চেনা ছন্দে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে ছোটাচ্ছেন রানের পাগলা ঘোড়া। এখন পর্যন্ত সাকিবকেই এবারের বিপিএলের সেরা তারকা বললে অত্যুক্তি হয় না। ১১ ম্যাচে করেছেন ২৪৯ রান। ২৭.৬৭ গড় আর ১৬৮ বেশি স্ট্রাইকরেট তার নামের পাশে। আর বল হাতে ১১ ম্যাচে নিয়েছেন ১৭ উইকেট। প্রতি উইকেটের জন্য খরচ করেছেন ১৫.৫৩ রান। ব্যাটিং তালিকায় শীর্ষ দশের কিছুটা বাইরে থাকলেও বোলারদের তালিকায় তিনি আছেন দ্বিতীয় স্থানে।
বেশ কিছুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাট হাতে সবচেয়ে ধারাবাহিক ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এর আগে গত বিপিএলে ৫১৬ রান করে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। অথচ এবারের আসরে যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন শান্ত। একই জার্সি, একই প্রতিপক্ষ, একই ময়দান, অথচ হাসছে না শান্তর ব্যাট। এই আসরে ১২ ম্যাচে তার রান মোট ১৭৫, ব্যাটিং গড় ১৪.৫৮ ও স্ট্রাইকরেট মাত্র ৯৩.৫৮। প্রতিযোগিতায় নিজেদের শেষ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৩৯ রান। পারফরম্যান্স এতটাই এলোমেলো ছিল যে গোটা টুর্নামেন্টে একটা ছক্কাও আসেনি তার ব্যাট থেকে।
বিপিএলের গত আসর দিয়ে অনেকটা পুনর্জন্মই হয়েছিল রনি তালুকদারের। ২০১৫ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়ার পর আর সুযোগ মিলছিল না এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের। কিন্তু ২০২৩ বিপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২৫ রান করে ফিরেছিলেন টি-টোয়েন্টি দলে। কিন্তু এবারের আসরে রংপুরের হয়ে রনি ৯ ইনিংসে করেছেন মাত্র ১৪৫ রান। গড় মাত্র ১৬। আর স্ট্রাইকরেট ১১৯.১। ত্রিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস মাত্র একটাই, ৩৯।
বাংলাদেশের প্রধানতম পেস ব্যাটারি তাসকিন আহমেদ বারুদ যেন নিভে গেছে। শেষ চার ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে উইকেটের পাল্লা ভারী করা তাসকিন প্রথম ৮ ম্যাচে নেন মোটে ৫ উইকেট। সব মিলিয়ে ১২ ম্যাচে ১৩ উইকেট শিকার তার। ইকোনমি ৮.৩২। তবে চোট সমস্যায় ভুগেছেন তিনি।
চলতি আসরে হতাশার আরেক নাম মেহেদী হাসান মিরাজ। আসরের শুরুতে বরিশালের নেতৃত্বের আলোচনায় থাকা এই অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে রীতিমতো ধুঁকছেন এবারের আসরে। আসরে ৯ বার ব্যাট করতে নেমে ১৭ গড়ে করেছেন মাত্র ১১৯ রান। রান সংগ্রাহকের তালিকায় আছেন ৩৯ নম্বরে। বল হাতে অবশ্য ১১ ইনিংসে আছে ১০ উইকেট। ইকোনমি ৬.৮১। জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি একাদশে নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন নাসুম আহমেদ। খুলনা টাইগার্সের হয়ে খেলা এই স্পিনার ১০ ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র ৮ উইকেট। ইকোনমি ৮.৫৪। দুই উইকেটের দেখা পেয়েছেন মাত্র একবার।
মার্চেই শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সিরিজ। এ বছর শান্ত নেতৃত্ব দেবেন দলকে। গত বছর যেভাবে শেষ হয়েছিল এই বছরের শুরুটা তেমন হলো না বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। সামনের দিনগুলোতে তার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে এটা বলাই যায়।