বিপিএল
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০৬ এএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:৫৬ পিএম
সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল- বাংলাদেশের ক্রিকেটের দুই মহাতারকা। এক সময়ে খুব ভালো বন্ধু থাকলেও এখন দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন তারা। যা গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে থেকে বেশ দৃশ্যমান হয়েছে। সাকিব-তামিমের মাঝে চলে আসা লড়াইটা গড়িয়েছে এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও। সাম্প্রতিক সময়ে সাকিব-তামিমের সম্পর্কের টানাপড়েন ও মাঠের নানা আলোচিত ঘটনা বাড়তি রোমাঞ্চ ছড়াচ্ছে এই লড়াইয়ে। এবার বিপিএলের ফাইনালে ওঠার ম্যাচে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মুখোমুখি হবে এ দুই দল। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হবে হাইভোল্টেজ এই ম্যাচটি।
চলতি টুর্নামেন্টে তৃতীয়বারের মতো হচ্ছে সাকিব-তামিম ‘ডার্বি’। এর আগের দুই দেখায় ১টি করে ম্যাচ জিতেছে দুই দল। প্রথম দেখায় ৫ উইকেটের দারুণ জয় পেয়েছিল বরিশাল। অবশ্য পরের দেখায় ১ উইকেটের কষ্টার্জিত জয় তুলে নেয় রংপুর। কিন্তু সবশেষ ম্যাচে সাকিবের করা উদযাপন ব্যঙ্গ করে উত্তেজনার পারদ আরও বাড়িয়ে দেন তামিম। সাকিবের বলে আউট হয়েছিলেন তামিম, সাকিব করেছিলেন স্বভাবসুলভ উদযাপন। এরপর সাকিব যখন আউট হয়ে ফেরেন, তখন সাকিবের উদযাপনকে ব্যঙ্গ করেই তামিমকে উদযাপন করতে দেখা যায়। দুজনের মাঝের দ্বন্দ্বটা যে কত প্রকট আকার ধারণ করেছে, সেটা বেশ ভালোভাবেই প্রকাশ পায় এই উদযাপনে। এবার ফাইনাল নিশ্চিতের মিশনে ফের মুখোমুখি হচ্ছেন এ দুই ক্রিকেটার।
কাগজে কলমে দুই দলই টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা। তবে চলতি আসরে রবিন রাউন্ডে দারুণ ছন্দে ছিল রংপুর। বিদেশিদের পাশাপাশি দলের লোকাল ক্রিকেটাররাও আছেন দারুণ ছন্দে। বিশেষ করে সাকিব আল হাসান ব্যাট হাতে ছন্দে ফেরার পর অপ্রতিরোধ্য মনে হচ্ছে রংপুরকে। সাকিবের পাশাপাশি শেখ মাহেদীও আছেন সেরা ফর্মে। বোলিংটা শুরু থেকে ভালো করলেও গেল কয়েক ম্যাচ রানও পাচ্ছেন নিয়মিত। তবে প্লে-অফে খেলতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি রংপুরের। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে ৬ উইকেটে হেরে বিপাকে পড়েছেন সাকিবরা। তাই তো বরিশালের বিপক্ষে জয় ছাড়া ভিন্ন কিছু ভাবতে চায় না রংপুর।
অন্যদিকে এবারের আসরে শুরুটা ভালো ছিল না বরিশালের। প্রথম চার ম্যাচে মাত্র এক জয় ছিল তাদের। তবে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ রাউন্ডে এসে প্লে-অফের টিকিট নিশ্চিত করেছিল তারা। এরপর এলিমিনেটর ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয়ে ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয় ফরচুনরা। ব্যাট হাতে সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারছিলেন না তামিম। তবে সময় যত গড়িয়েছে ড্যাশিং এই ওপেনারের ব্যাট হেসেই চলেছে। এলিমিনেটরে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে দারুণ এক ফিফটি হাঁকিয়ে দলকে জেতান এই বাঁহাতি ব্যাটার। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখবেন তামিম, এমনটাই প্রত্যাশা দলের।
এই ম্যাচে দেশের সেরা দুই ক্রিকেটারের মাঠের লড়াইটা হতে পারে জমজমাট। টুর্নামেন্টের শুরুটা খুব ভালো ছিল না দুজনের কারও। তবে ক্রমেই তারা ফিরেছেন আপন চেহারায়। ১৩ ইনিংসে ৪৪৩ রান করেছেন তামিম, এখনও পর্যন্ত যা আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ১৬১ স্ট্রাইক রেটে ২৫৪ রান আর ওভারপ্রতি মাত্র ৬.১৫ রান দিয়ে ১৭ উইকেটের যুগলবন্দিতে টুর্নামেন্টসেরা হওয়ার দাবিদার সাকিব। দুজনের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের বড় ভূমিকা থাকতে পারে এই কোয়ালিফায়ার ম্যাচের ফলাফলেও। ডু অর ডাই ম্যাচের আগের দিন মঙ্গলবার বিশ্রামেই কাটিয়েছেন দুই দলের মূল ক্রিকেটাররা। তবে মিরপুরের একাডেমি মাঠে আলাদাভাবে দুই দলের কয়েকজন ক্রিকেটার ঐচ্ছিক অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন রংপুর রাইডার্সের কোচ সোহেল ইসলাম। এ সময় সাকিব-তামিমের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান, ‘ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। এটা নিয়ে একদমই চিন্তা করি না। আমার দল নিয়ে চিন্তা করি। দলের মধ্যে সেও (সাকিব) একটা অংশ। প্রতিপক্ষ দলে যে (তামিম) আছে, সেও তাদের দলের অংশ। দলের পারফরম্যান্সে ক্রিকেটার কীভাবে প্রভাব রাখতে পারবে, সেটা নিয়েই চিন্তা করি। ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই এখানে।’
একই কথার প্রতিধ্বনি ছিল বরিশালের কোচ মিজানুর রহমান বাবুলের কণ্ঠেও, ‘আমরা নিজেদের খেলাটা উপভোগের চেষ্টা করি। ম্যাচের মধ্যে তামিম-সাকিবের জিনিসটা আমাদের মাথায় আসে না। আমি চাই, আমরা যে দলে কাজ করি... তামিম সেরা ক্রিকেট খেলুক, আমার দল জিতুক। এই জিনিসটা উপভোগ করি। মাঠের খেলাটা উপভোগ করি। দুজন অবশ্যই বাংলাদেশের দুই সেরা ক্রিকেটার। দুজন দুই দলে খেলে। দুজনই চাইবে নিজের দলকে জেতাতে। এই টুর্নামেন্টে দুজনই ভালো ক্রিকেট খেলছে। তাই যে ভালো খেলবে, তার দল জিতবে।’
এই ম্যাচে বরিশালকে হারাতে পারলে প্রায় সাত বছর পর আরও একবার ফাইনালের টিকিট পাবে রংপুর। সবশেষ ২০১৭ সালের আসরে ফাইনাল খেলে তারা। সেবার ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারিয়ে এখন পর্যন্ত নিজেদের একমাত্র শিরোপাও সেবার জেতে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। আর ছন্দ রেখে রংপুরের বাধা উতরে গেলে এক আসর পর আবারও শিরোপানির্ধারণী মঞ্চে নামতে পারবে বরিশাল। ২০২২ সালে ফাইনালে উঠেছিল দলটি। সেবার কুমিল্লার কাছে স্রেফ ১ রানে হেরে শেষ হয় তাদের শিরোপার স্বপ্ন। ফাইনালে উঠতে পারলে এবারও কুমিল্লার সামনেই পড়বে তারা।