বিপিএল
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:২০ পিএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:২৪ পিএম
জিতলেই ফাইনাল, হেরে গেলে টুর্নামেন্ট থেকেই বিদায়। এমন সমীকরণে চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মুখোমুখি হয়েছে ফরচুন বরিশাল ও রংপুর রাইডার্স। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ের ম্যাচটিতে আলোচনার কেন্দ্রে দেশের ক্রিকেটের দুই মহাতারকা সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের কারণে ম্যাচটি অন্য মাত্রা পেয়েছে। তবে হাইভোল্টেজ এই ম্যাচে ব্যাট হাতে আলো ছড়াতে পারেননি সাকিব। তার দল রংপুরও পড়েছিল ব্যাটিং বিপর্যয়ে। সেখান থেকে টর্নেডো ইনিংসে দলকে একাই টেনে তুলেছেন শামীম পাটওয়ারী। ডু অর ডাই ম্যাচে বাঁহাতি এই ব্যাটারের অনবদ্য ইনিংসে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছে রাইডার্সরা।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অলিখিত সেমিফাইনাল ম্যাচে টস জিতে রংপুরকে ব্যাটিংয়ে পাঠান বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটের বিনিময়ে স্কোর বোর্ডে ১৪৯ রান সংগ্রহ করে রংপুর। ব্যাট হাতে ২৪ বলে সমান পাঁচটি করে চার-ছক্কায় ৫৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন শামীম।
এদিন মাঠে দর্শকরা নড়েচড়ে বসার আগেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে রংপুর। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন বরিশালের পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ওভারের প্রথম বলে শেখ মাহেদী উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন। বিদায়ের আগে ৫ বলে মাত্র ২ রান করেন তিনি। এরপর ওভারের শেষ বলে সাকিব আল হাসানকেও সাজঘরে পাঠান সাইফউদ্দিন। ডানহাতি এই পেসারের বলে মুশফিকের তালুবন্দিতে ৪ বলে মাত্র ১ রান করে বিদায় নেন টাইগার অলরাউন্ডার।
এরপর পঞ্চম ওভারে ১২ বলে ব্যক্তিগত ৮ রান করা ওপেনার রনি তালুকদারকে প্যাভিলিয়নের পথ ধরান কাইল মায়ার্স। রান খরায় ভুগতে থাকা ডানহাতি এই ব্যাটার মিলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। এতে পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে রংপুরের স্কোর দাঁড়ায় ২৬ রানে তিন উইকেট। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন দুই বিদেশি জিমি নিশাম ও নিকোলাস পুরান।
টানা তিন চারে মোমেন্টাম ঘোরানোর প্রচেষ্টায় ছিলেন নিশাম। তবে এই কিউই অলরাউন্ডার আজ আর জাদু দেখাতে পারেননি। দলীয় রান ৪৮ যখন, তখনই ফিরে যান নিশাম। করেছেন ২২ রান। তার আগে নিকোলাস পুরান ফিরেছেন ৮ বলে ৩ রানের হতাশাজনক ইনিংস খেলে।
বড় কিছু করা হয়নি মোহাম্মদ নবি ও নুরুল হাসান সোহানের। ইনিংস মেরামতের চেষ্টায় ব্যর্থ ছিলেন দুজনেই। নবির রান ১২ আর সোহানের ১৪। ৭৭ রানে গেল ৭ উইকেট। সোহান ছাড়া বাকি সকলেই হয় বাজে শট খেলেছেন, নয়তো বাড়তি বাউন্সে হয়েছেন পরাস্ত।
ইনিংস শেষে শামীম পাটওয়ারী তেমনটাই বলেছেন, ‘আমি প্রস্তুত ছিলাম। যখন সুযোগ আসবে তখনই নিজের সেরাটা দিয়ে দেব।’ ব্যাটিংয়ে ডিমোশন পেয়েও ক্যামিও খেলেছেন শামীম। বিপিএলে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডে সাকিবের সঙ্গে ভাগ বসিয়েছেন। ২০ বলে ফিফটি করার দিনে ছিলেন অগ্নিমূর্তি রূপে। আবু হায়দার রনিকে নিয়ে ৩১ বলে ৭০ রানের জুটি ম্যাচের গতিপথেও ফেরায় রংপুরকে। ১৫০ রান কঠিন হবে বলেই মেনেছেন শামীম, ‘এই পিচে এটা আদর্শ রান না হলেও আমাদের মতো ওরাও ভুগবে।’
বরিশালকে হারাতে পারলে সাত বছর পর আরও একবার ফাইনালের টিকিট পাবে রংপুর। সবশেষ ২০১৭ সালের আসরে ফাইনাল খেলে তারা। সেবার ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারিয়ে এখন পর্যন্ত নিজেদের একমাত্র শিরোপাও জেতে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। আর ছন্দ রেখে রংপুরের বাধা উতরে গেলে এক আসর পর আবারও শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে নামতে পারবে বরিশাল। ২০২২ সালে ফাইনালে উঠেছিল দলটি। সেবার কুমিল্লার কাছে ১ রানে হেরে শেষ হয় তাদের শিরোপার স্বপ্ন। ফাইনালে উঠতে পারলে এবারও কুমিল্লার সামনেই পড়বে তারা।
একটা পর্যায়ে ১০০ হওয়া নিয়ে ছিল সংশয়। এরপর শামীমের আগমন। শুরুটা ছিল ধীরগতির। এরপর শামীম ঝড়। তাতে বরিশালের বিপক্ষে শুরুর ধস সামলে চ্যালেঞ্জিং স্কোর পেয়ে যায় রাইডার্স। মাত্র ২৪ বলে ৫৯ রান করে অপরাজিত থাকেন শামীম। হাঁকিয়েছেন সমান পাঁচটি করে চার-ছয়। তার সঙ্গে ৯ বলে ১২ রান করে অপরাজিত ছিলেন রনি। দুজনে অষ্টম উইকেটের জুটিতে ৩১ বলে ৭২ রান যোগ করেন।
বরিশালের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন জেমস ফুলার। ২ উইকেট নেন সাইফউদ্দিন। একটি করে উইকেট নেন কাইল মায়ার্স-মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫৩ রান গুনে ইনিংসের সবচেয়ে খরুচে ছিলেন ম্যাককয়।