বিপিএল
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:১৩ পিএম
আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:০৯ এএম
শামিম পাটোয়ারী ভবিষৎদ্ব্যণী করে বসেছিলেন, ‘কাঠখড় পোহাতে হবে ফরচুন বরিশালকেও।’ সেই প্রেডিকশন যদিও ধোপে টেকেনি। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও ভুগেছে রংপুর রাইডার্স। পক্ষে আসেনি ফলটাও। ১ মার্চের টিকিট নিশ্চিতের লড়াইয়ে আরেকবার পেরে ওঠেননি সাকিবরা। ১৫০ রানের পুজি ৬ উইকেট জমা রেখেই পেরিয়ে গেছে তামিম ইকবালের দল। শিরোপার মঞ্চে তাদের প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আগামী ১ মার্চ ফাইনালে মুখোমুখি হবে দুই দল।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শেরে-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে বোলিং, ব্যাটিং কিংবা ফিল্ডিং— সব বিভাগেই হেরে বসেছে রংপুর৷ জিতলেই ফাইনাল এমন সমীকরণে টস হেরে প্রথমে জমা করে ১৫০ রান। তাও শামিমের শেষের ঝড়ের বদৌলতে। তবে দেড়শ রানের পুঁজি যথেষ্ট হয়নি রাইডার্সদের। দশম আসরে চতুর্থবারের মতো শিরোপার মঞ্চ নিশ্চিত করে বরিশাল।
এদিন দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে কিছুটা একপেশে ম্যাচই খেলেছে বরিশাল। রানতাড়া করতে নেমে বিপিএলে প্রথমবার নন-স্ট্রাইকে ছিলেন তামিম। কারণটা যে ফজল হক ফারুকী তা সবারই জানা। তবে এড়িয়ে গিয়ে লাভ হয়নি। তামিম আউট হয়েছেন ১০ রান করে। আবু হায়দার রনির বলে মোহাম্মদ নবীকে ক্যাচ দিয়ে বসেন ড্যাশিং এই ওপেনার। একই ওভারে কাঁটা পড়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজও। এক বলের বিরতিতে এলবিডব্লিউতে আউট তিনি। বিদায়ের আগে ১২ বলে ৮ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
এরপর দলের হাল ধরেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও সৌম্য সরকার৷ তৃতীয় উইকেটে তারা দুজনে মিলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন। এই জুটিতেই রংপুরের কাছ থেকে ম্যাচ বেরিয়ে গিয়েছে। সাবধানী ইনিংস খেলে বরিশালকে নিয়ে গিয়েছেন লক্ষ্যের আরও কাছে। দশম ওভারে আফগানিস্তানের তারকা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী আক্রমণে এসেই সৌম্যকে ফেরান। ১৮ বলে ২২ রান করে ফাইনালের পথে দলকে এগিয়ে দিয়ে যান সৌম্য।
অপর প্রান্তে মুশফিক ছন্দে ছিলেন আজ শুরু থেকেই। কাইল মায়ার্সকে নিয়ে রংপুরের নাভিশ্বাস তুলেছেন। খুব দ্রুতগতির না হলেও খেলেছেন কার্যকরী ইনিংস। অন্যদিকে বিগশট উপহার দেন মায়ার্স। ১৫ বলে ২৮ রানের ইনিংসে ছিল ৩ ছয়। আউটও হয়েছেন বড় শট খেলতে গিয়ে। বাউন্ডারি লাইনে হাসান মাহমুদ এবং রনি তালুকদারের বোঝাপড়ায় আউট তিনি।
মুশফিক বাকি কাজটা সেরে নিয়েছেন ডেভিড মিলারকে সঙ্গে নিয়ে। দশবছরে ৮ বার দল পালটে বিপিএল শিরোপা পাননি তিনি। এবার সেই লক্ষ্য পূরণের সুযোগটা আবার পাচ্ছেন। ব্যাট হাতে ৩৮ বলে ৪৭ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল৷ তার ইনিংসে ছিল ৬ চার ও ১ ছক্কার মার। তার সঙ্গী মিলার অপরাজিত থাকেন ১৮ বলে ২২ রানে। আর বিপিএলে পাঁচবারের টুর্নামেন্ট সেরা সাকিব এবার আসর শেষ করছেন কোয়ালিফায়ার থেকেই।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে রংপুর। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন বরিশালের পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ওভারের প্রথম বলে শেখ মাহেদী উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন। বিদায়ের আগে ৫ বলে মাত্র ২ রান করেন তিনি। এরপর ওভারের শেষ বলে সাকিব আল হাসানকেও সাজঘরে পাঠান সাইফউদ্দিন। ডানহাতি এই পেসারের বলে মুশফিকের তালুবন্দিতে ৪ বলে মাত্র ১ রান করে বিদায় নেন টাইগার অলরাউন্ডার।
এরপর পঞ্চম ওভারে ১২ বলে ব্যক্তিগত ৮ রান করা ওপেনার রনি তালুকদারকে প্যাভিলিয়নের পথ ধরান কাইল মায়ার্স। রান খরায় ভুগতে থাকা ডানহাতি এই ব্যাটার মিলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। এতে পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে রংপুরের স্কোর দাঁড়ায় ২৬ রানে তিন উইকেট। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন দুই বিদেশি জিমি নিশাম ও নিকোলাস পুরান। টানা তিন চারে মোমেন্টাম ঘোরানোর প্রচেষ্টায় ছিলেন নিশাম। তবে এই কিউই অলরাউন্ডার আজ আর জাদু দেখাতে পারেননি। দলীয় রান ৪৮ যখন, তখনই ফিরে যান নিশাম। করেছেন ২২ রান। তার আগে নিকোলাস পুরান ফিরেছেন ৮ বলে ৩ রানের হতাশাজনক ইনিংস খেলে।
বড় কিছু করা হয়নি মোহাম্মদ নবি ও নুরুল হাসান সোহানের। ইনিংস মেরামতের চেষ্টায় ব্যর্থ ছিলেন দুজনেই। নবির রান ১২ আর সোহানের ১৪। ৭৭ রানে গেল ৭ উইকেট। সোহান ছাড়া বাকি সকলেই হয় বাজে শট খেলেছেন, নয়তো বাড়তি বাউন্সে হয়েছেন পরাস্ত। এরপর ব্যাটিংয়ে ডিমোশন পেয়েও ক্যামিও খেলেছেন শামীম। বিপিএলে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডে সাকিবের সঙ্গে ভাগ বসিয়েছেন। ২০ বলে ফিফটি করার দিনে ছিলেন অগ্নিমূর্তি রূপে। আবু হায়দার রনিকে নিয়ে ৩১ বলে ৭০ রানের জুটি ম্যাচের গতিপথেও ফেরায় রংপুরকে। এতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটের বিনিময়ে স্কোর বোর্ডে ১৪৯ রান সংগ্রহ করে রংপুর। ব্যাট হাতে ২৪ বলে সমান পাঁচটি করে চার-ছক্কায় ৫৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি শামীম।
বল হাতে বরিশালের হয়ে ২ উইকেট নেন সাইফউদ্দিন। একটি করে উইকেট নেন কাইল মায়ার্স-মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫৩ রান গুনে ইনিংসের সবচেয়ে খরুচে ছিলেন ম্যাককয়। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন মুশফিকুর রহিম৷