× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘বুড়োদের’ বাজিমাত

হেলাল নিরব

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪ ১০:১৮ এএম

আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৪ ১২:৩৩ পিএম

পঞ্চপাণ্ডবের এই ত্রয়ী বরিশালের শিরোপার ফরচুন (ভাগ্য) ফিরিয়েছেন— ছবি: আ. ই. আলীম

পঞ্চপাণ্ডবের এই ত্রয়ী বরিশালের শিরোপার ফরচুন (ভাগ্য) ফিরিয়েছেন— ছবি: আ. ই. আলীম

কুড়িতে বুড়ি আর চল্লিশে চালশে— প্রবাদগুলো নতুন করে লেখার সময় এসেছে। কুড়ি পেরিয়ে চল্লিশে চালশে নয়, অনেকের কাছে তখনও সেই শুরুর উদ্যম! খেলোয়াড়দের বয়স বিবেচনায় কথাটি বেশি বেশি মনে হতে পারে। ত্রিশ পেরোলেই যেখানে বুড়োদের খাতায় ফেলে দেওয়া হয়, সেখানে চল্লিশ পেরোনো কোনো খেলোয়াড় তো স্রেফ বাতিলের খাতায়। বাংলায় আরেকটি প্রবাদ আছে, ‘পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে।’ শুক্রবার বিপিএলের ফাইনালে প্রবাদটির প্রমাণ দিয়েছে ফরচুন বরিশাল। স্বগর্বে তামিম ইকবাল তাই লিখে বসেছেন, ‘পুরোনো হতে পারি কিন্তু ফেলনা না।’

তারুণ্যনির্ভর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জয়ের পর তামিম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ওল্ড বাট নট আউট।’ বাংলায় ভাবানুবাদ করলে অনেকটা এমন দাঁড়ায়, পুরোনো হলেও আমরা বাতিলের খাতায় ছিলাম না বা নেই। ফাইনাল নিশ্চিতের পর মুশফিকুর রহিমের মুখেও সেটিই ঘুরেছিল, ‘যেকোনো ফরম্যাটে অভিজ্ঞতার একটা দাম আছে, এটা তো প্রমাণ হলো।’ অভিজ্ঞতা, পুরোনো, কুড়ি-চল্লিশের এত কথা মূলত বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে কেন্দ্র করে। ২০২৪ সালের মারকাটারি আসরের যখন ড্রাফট হলো তখন থেকেই একটি কথা ঘুরছিল, ‘বুড়োদের দল ফরচুন বরিশাল।’

সমালোচকদের ‘বুড়ো দল’ বলার পেছনেও যথেষ্ট কারণ। বরিশালের অধিনায়ক তামিম ছাড়িয়েছেন ৩৪-এর ঘর। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরও নিয়েছেন বহুদিন। বিপিএল শুরুর আগে প্রায় মাস ছয়েক ছিলেন না ক্রিকেটের আশপাশেও। শোয়েব মালিক তো বয়সের চল্লিশের কোটা ছাপিয়ে এগিয়েছেন আরও দুই ধাপ। ৪২ বছরের পাকিস্তানি তারকা ছাড়াও ত্রিশ পেরিয়েছেন এমন এক ডজন ক্রিকেটার ছিলেন বরিশালের দলে। মুশফিকুর রহিমের বয়স ৩৬ বছর, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৩৮, সৌম্য সরকার এবং তাইজুল ইসলামের বয়সও পেরিয়েছে ত্রিশের কোঠা। টি-টোয়েন্টির মারকাটারি ফ্রাঞ্চাইজি আসরে বুড়োদের নিয়ে তাই সমালোচনা হচ্ছিল। হাসিঠাট্টাও হয়েছে বেশ। কিন্তু তামিম ইকবালরা জবাব দিয়েছেন মাঠের খেলায়। দলগত পারফরম্যান্সে লিগ পর্ব থেকে এলিমেনটর, কোয়ালিফায়ার হয়ে অবশেষে চ্যাম্পিয়নও বনেছেন। বরিশালের চারবারের চেষ্টায় শিরোপার শাপমোচনের পর তামিম তাই তৃপ্ত, ‘বুড়ো বলো না।’

পুরোনো বা অভিজ্ঞ মানেই যে বেশি সুযোগ সেটি করে দেখাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তামিম। আসরে ব্যাট হাতে ও নেতৃত্বে দারুণ করেছেন। তামিম করেছেন আসরের সর্বোচ্চ ৪৯২ রান। ডজনখানেক তরুণকে পেছনে ফেলে হয়েছেন টুর্নামেন্টসেরাও। ম্যাচজয়ী কিছু ইনিংস লেখা মুশফিক করেছেন আসরের পঞ্চম সর্বোচ্চ ৩৮০ রান। মাহমুদউল্লাহ নিচের দিকে ছিলেন যথেষ্ট কার্যকরী। তার ব্যাট চালানো দেখে ‘বাতিলের খাতায়’ ফেলে দেওয়া অভিজ্ঞ তারকাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও অকপটে জানিয়েছে, ‘আসছে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সে অটোচয়েজ।’ বিপিএলে বরিশালের লঞ্চ মাহমুদউল্লাহ টেনেছেন অভিজ্ঞ কাঁধেই, শেষের দিকে ঝড় তুলে করেছেন ২৩৭ রান। কম যাননি শোয়েব মালিক কিংবা সৌম্য সরকার। অধিনায়ক তামিম ইকবাল আলাদা করেই টেস্ট খেলোয়াড় তকমা জুটে যাওয়া তাইজুল ইসলামের প্রশংসা করেছেন।  

মিরপুরে শিরোপা ফয়সালা হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে কিছুটা ক্ষোভও ঝেড়েছেন তামিম, ‘আমার মনে হয় কথাটা বলা উচিত হবে না কিন্তু এখনই উপযুক্ত সময় বলার। যখন ড্রাফট থেকে তাইজুলকে দলে নেই একটি দল হাসছিল। আমার খুব খারাপ লেগেছিল। একটা আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়কে আমি নিয়েছি আর একটি দল হাসছে। খুবই খুশি তার জন্য। তার এই পারফরম্যান্সের কারণে বিসিবি তাকে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ দিচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় এদের অবদান অনেক ছিল।’

বরিশালকে ‘বুড়োদের দল’ খোঁটা দেওয়ায় মুশফিকও সেদিন হাসতে হাসতে পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় এই ধারণাই ভুল, যে-ই বলুক। অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্য, সব সময় একটা মিশ্রণ থাকে যেকোনো ফরম্যাটে। টি-টোয়েন্টি বলেন, ওয়ানডে বলেন, টেস্ট বলেন। এটাই হচ্ছে দুনিয়ার একটা নিয়ম। নতুনরা আসবে, পুরোনোরা চলে যাবে এবং তাদের সংমিশ্রণে ওই জিনিসটা তৈরি হয়ে যাবে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তো বললেন যে বরিশাল সবচেয়ে বুড়োদের দল। অভিজ্ঞদের টি-টোয়েন্টিতে খেলা হয় না। তো, হেয়ার উই আর।’

মুশফিকরা শুধু ফাইনালে উঠেই থামেননি, চারবারের চ্যাম্পিয়নদের স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছেন। তামিম তাই বুক ভরে নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, ট্রফিটি অভিজ্ঞ মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহকে উৎসর্গ করা হলো। সৌম্যরা বাতিলের খাতা থেকেই উঠে আসেন সদর্পে। ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘এজ ইজ জাস্ট আ নাম্বার। ইয়ং ইজ আ ফিলিং!’ তামিম সেদিন সংবাদ সম্মেলনে হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘কয়েক বছর আগে যেমন আনফিট ছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি এখন। দেখেন না পেট বের হয়ে গেছে।’

বয়স আসলেই একটি সংখ্যামাত্র, তামিম-মাহমুদউল্লাহরা প্রমাণ করেছেন। ট্রফি উঁচিয়ে হাজারো ছবির পোজ দিয়ে বরিশালের খেলোয়াড়রাও দেখিয়ে দিয়েছেন। ফরচুন বরিশালের পুরো আসরকে এক কথায় শিরোনাম টানলে এখন এভাবে হতে পারে, ‘বিপিএলে ‍বুড়ো হাড়ের ভেলকি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা