আবদুল্লাহ আল মাসুম
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪ ০৩:১৩ এএম
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪ ১০:৪৩ এএম
বাংলাদেশ নারী দল। ফাইল ছবি
আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের বড় পরিচয় ক্রিকেট। মাশরাফি মর্তুজা, সাকিব আল হাসানরা দুনিয়া মাতানো নাম হলেও একটা বড় অতৃপ্তি রেখে দিয়েছেন বারবার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় কোনো শিরোপা উপহার দিতে পারেননি তারা। মাশরাফি-সাকিবরা যা পারেননি সেটা করে দেখিয়েছেন সালমা খাতুন-নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। নারী এশিয়া কাপ ক্রিকেটে শিরোপা জিতে পুরো দেশকে উৎসবে ভাসান লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা। মেয়েদের হাত ধরে ২০১৮ সালে এশিয়া কাপে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ২০১৯ দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে বাংলার বাঘিনীরা জেতেন স্বর্ণপদক। কিন্তু এত অর্জনের পর কী পাচ্ছে নারী ক্রিকেট দল, বড় হয়ে উঠেছে এ প্রশ্নটিই। তবে কি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগে বিপিএল খেলার সুযোগ পাবেন না বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা, ওঠে এমন কথাও।
গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিক সাফল্যের মধ্যে আছে দেশের নারী ক্রিকেট দল। ২০২৩ সালে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তির সঙ্গে সিরিজ ড্র, পাকিস্তানকে সিরিজে হারানোর তরতাজা স্মৃতি রয়েছে তাদের। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে আইসিসির সেরাদের তালিকায়ও জায়গা করে নিয়েছেন মারুফা আক্তার। এমন শ্রেষ্ঠত্বের পরও টাইগ্রেসদের বিপিএল খেলার স্বপ্ন থেকে গেছে স্বপ্নই।
বিপিএলে খেলতে উন্মুখ হয়ে আছেন মেয়েরা। নারী বিপিএল দেরিতে শুরু হলেও আক্ষেপ নেই বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের। বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম আলোচিত পেসার জাহানারা আলমের কথায়, কোনো জিনিস তৈরি করলে তাড়াহুড়া করে শুরু করলে আসলে কিছুই হয় না। আপনি যদি দেখেন, পাকিস্তান কিন্তু আমাদের আগে থেকে ক্রিকেট খেলছে। ওরা কিন্তু গত বছর থেকে নারী পিএসএল চালু করেছে। আপনি যদি নারী আইপিএলের কথা চিন্তা করেন, পুরুষের চেয়ে দেরিতে শুরু করেছে। খুব শিগগিরই নারী বিপিএল চালু হবে, আমরা আশাবাদী।
আরও আগেই নারী বিপিএল শুরু হওয়াটা জরুরি ছিল বলে মনে করছেন জাহানারা, নারী বিপিএল যদি তিন বছর আগে শুরু করা যেত তাহলে সেটি আমাদের জন্য খুবই ভালো হতো। পুরুষ ক্রিকেট যদি দেখেন, আমরা ১৯৯৭ সালে কিন্তু আইসিসি ট্রফি জিতেছিলাম। কিন্তু আমাদের দেশের ক্রিকেটের প্রসার শুরু হয়েছিল ২০০০ সালের পর থেকে। সেদিক থেকে যদি চিন্তা করি, ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ জেতার পর যদি এটা (নারী বিপিএল) চালু হতো, তাহলে বেশি ভালো হতো। এটি চালু হলে আর্থিক দিকটার চেয়ে স্কিলের দিক দিয়ে আমরা বেশি এগিয়ে যেতাম। আইপিএল বা পিএসএলে ৩-৪ জন বিদেশি প্লেয়ার খেলে থাকেন। তাদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার, জ্ঞান আদান-প্রদান, মাঠে একসঙ্গে নামলে ঘরোয়া ক্রিকেটাররা অনেক এগিয়ে যান।
নারী বিপিএল নিয়ে প্রতিশ্রুতির মধ্যেই আছে বিসিবি। এ বছরের শেষ কিংবা ২০২৫ সালের শুরুতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ মাঠে গড়াতে পারে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। বলেন, ‘এই বছরের শেষদিকে না হলেও আগামী বছরের শুরুর দিকে হবে নারী বিপিএল। এখনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে চারটি দল থাকতে পারে টুর্নামেন্টে। বিসিবি কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে কথাও বলছে। আলোচনা চলছে। আশা করছি খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’ যোগ করেন, আমরা খুবই আশাবাদী। ভেন্যু ও সবকিছু সমন্বয় করতে পারলে চলতি বছরই আয়োজন করতে পারব। অন্তত চারটা দল নিয়ে হলেও অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সেটা করে ফেলতে পারব। যারা (দল নিতে) আগ্রহী, তাদের ক্রিকেটীয় ব্যাকগ্রাউন্ডটা দেখা হবে।
বিসিবির নারী বিপিএলের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ নারী দলের সাবেক ক্রিকেটার ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রথম নারী আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসি। তার ভাষায়, এ বছরের ডিসেম্বর কিংবা পরের বছর জানুয়ারিতে ওমেন্স বিপিএল হবে জেনেছি। আমার খুব আনন্দ লাগছে এই ভেবে যে, ছেলেদের মতো মেয়েরাও বিপিএল খেলবে। আমার বিশ্বাস, বিশ্ব ক্রিকেটে এক দিন আমাদের দেশের মেয়েরাও এগিয়ে যাবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম ব্যাটিং নির্ভরতা মুশফিকুর রহিম বলেছেন, বিপিএলে খেলে আমাদের বেশিরভাগ ক্রিকেটারের সংসার চলে। ব্যাটিংয়ে মি. নির্ভরতার কথা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারের জন্য বিপিএল সবচেয়ে বড় সহায়ক। দেশের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ সাফল্য এনে দেওয়ার পরও বঞ্চিত বাংলাদেশের নারীরা। ক্যারিয়ারের অনিশ্চয়তা থাকার পরও নিজেদের সবটুকু উজাড় করে ক্রিকেট খেলছে মেয়েরা। হয়তো কোনো এক দিন সুদিন আসবে, এই আশায় বুক বেঁধে আছে আমাদের নারী ক্রিকেটাররা।