× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাফল্য গাথা

আহ্লাদি ইয়ারজান থেকে জয়িতা

পঞ্চগড় প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪ ২২:০৭ পিএম

আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪ ২২:২৪ পিএম

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৬ দলের গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম। সংগৃহীত ফটো

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৬ দলের গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম। সংগৃহীত ফটো

পরিবারে খাদ্যের জোগানেই হিমশিম খেতে হয়, সেখানে শখ পূরণের আহ্লাদকে তো বিলাসিতাই বলা যায়। বিলাসিতা না ভেবে যদি বিষাদের সূর ঠেলে রাখার প্রচেষ্টাও বলা হয়– সেটিও নিশ্চয়ই ভুল হবে না। ভুল কিংবা শুদ্ধ– এতসব ধারণার বেড়াজাল আর সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করা চাট্টিখানি কথা নয়; বিদ্যমান বাস্তবতায়। এতসব বাস্তবতার তত্ত্ব আঁকড়ানো সময়ের সঙ্গে বেয়ে শখকে স্বপ্নের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছালেন ইয়ারজান বেগম। যার নামের সঙ্গে জুড়েছে ব্যক্তিগত খ্যাতি ও দেশের সম্মান।

সদ্য নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে নেমেছিল বাংলাদেশ। টাইব্রেকারে প্রতিপক্ষের তিনটি শট রুখে দিয়ে বাংলাদেশের জয়ের মূল কারিগর গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে দেশ শুধু অনন্য সম্মান অর্জন করেনি– ইয়ারজানকেও খ্যাতিমান করে তুলেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। তার এই অসাধারণ নৈপুণ্যের পর যেন আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু করেছে ইয়ারজানের গ্রামের বাড়িতে।

এই সাফ ফুটবল জয়িতার বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলা হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামে। বাবা আব্দুর রাজ্জাক শ্বাসকষ্টের রোগী। অসুস্থতা তাকে দিনে দিনে এতটা কাহিল করেছে, এখন আর শারীরিক কোনো পরিশ্রম করতে পারেন না তিনি। সংসারের হাল মা রেনু বেগমের হাতে। মানুষের বাড়ির কাজ, এমনকি মাঝে মাঝে দিনমজুরের পারিশ্রমিক হিসেবে দৈনিক তার আয় দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা। এই আয় দিয়েই দুই মেয়েসহ চারজনের সংসার চলে টেনেটুনে।

পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক ছিল ইয়ারজানের। হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় শুরু তার ফুটবলযুদ্ধ। স্কুলের হয়ে জেলা পর্যায়ে একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন হয় ইয়ারজানের ফুটবল দল। জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন খেলার সময় ইয়ারজানের প্রতিভায় মুগ্ধ হন পঞ্চগড় টুকু ফুটবল একাডেমির পরিচালক টুকু রেহমান। এরপর তিনি পঞ্চগড় স্টেডিয়ামে টুকু ফুটবল একাডেমি থেকে ইয়ারজানকে প্রশিক্ষিত করার ব্যবস্থা করেন। পরিবারে অভাবের কারণে প্রতিদিন ১২ কিলোমিটার দূরে জেলা শহরের মাঠে প্রশিক্ষণে যাওয়ার গাড়ি ভাড়াও দিতে পারতেন না ইয়ারজানের বাবা-মা। খাবার জোগানই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে খেলার জন্য টাকা খরচ করা ইয়ারজানের পরিবারে ছিল চিন্তার বাইরে। একে তো গরিব ঘরের প্রত্যন্ত এলাকার মেয়ে, তার ওপর আবার ফুটবল খেলা। ইয়ারজানের ফুটবল খেলা মেনে নিতে পারেননি এলাকার মুরব্বিরাও। তাদের সমর্থন দেন ইয়ারজানের বাবা-মা। তারা ইয়ারজানকে খেলাধুলা করতে বাধা দেন। তবে বাবা-মাকে বুঝিয়ে এবং লোকলজ্জা পেছনে ফেলে এগিয়ে যান ইয়ারজান। জেলা পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে একাধিকবার বিভিন্ন লিগ ও ক্লাবের হয়ে খেলেছেন তিনি।

ইয়ারজানের শোবার ঘরে ভাঙা শো-কেসে সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন খেলায় পাওয়া সাফল্যের স্মারক। প্রবা ফটো

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকালে ইয়ারজানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়স্বজন ছাড়াও এলাকার লোকজনের ভিড়। ভাঙাচোরা ঝুপড়ি ঘরে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন ইয়ারজান বেগম। বাঁশের বেড়ার ফাঁক গলিয়ে বাইর থেকে দেখা যায় ঘরের ভেতরের হতদরিদ্রের প্রতিচ্ছবি। খুদে এই ফুটবলকন্যার সাফল্যের খবরে তার ভাঙা বাড়িতে দর্শনার্থী উৎসুক মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে।

ইয়ারজানের মা রেনু বেগম বলেন, ‘খেলাধুলা না করার জন্য মেয়েকে কতবার মেরেছি, বকাবকি করতাম, ভয় দেখাতাম। খেলতে যেতে নিষেধ করতাম। কিন্তু সে লুকিয়ে চলে যেত। যখন বুঝলাম সে ভালো খেলতেছে, তখন আর নিষেধ করিনি। অভাবের সংসার, মেয়েকে কখনও ভালো কিছু খাওয়াতে পারিনি। অনেক সময় না খেয়েই খেলতে চলে যেত।’

ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দুবার টিবির (যক্ষ্মা) চিকিৎসা নিয়েছি। কাজ করতে পারি না। ইয়ারজানের মায়ের সামান্য আয় দিয়ে আমাদের খেয়ে না-খেয়ে থাকতে হয়। কোনো কোনো দিন আমার মেয়ে সকালে নাশতা করে সেই নাশতা দিয়েই সারা দিন কাটিয়েছে। দুপুর ও রাতে ভাত পায়নি, কারণ আমি খাবার জোগাড় করতে পারিনি। এসব কারণে মেয়েকে খেলা বাদ দিতে বলেছিলাম।’ 

টুকু ফুটবল একাডেমির পরিচালক টুকু রেহমান বলেন, ‘হাড়িভাসার মতো প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ইয়ারজান নিয়মিত শহরে এসে প্রশিক্ষণ নিত। তার এই ফুটবল খেলা গ্রামের অনেকেই ভালো চোখে দেখত না। এসব উপেক্ষা করে প্রতিদিন সে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা আগে মাঠে হাজির হয়ে আমাকে ফোন করে আসতে বলত। তার খেলার প্রতি আগ্রহ দেখে অবাক হতাম। তার স্বপ্ন অনেক বড়। এখন সে স্বপ্নের অনেক কাছাকাছি। আশা করি, সে আগামীতে জাতীয় দলের হয়ে খেলবে।’

হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘ইয়ারজানের নেতৃত্বে আমাদের স্কুল পরপর তিনবার স্কুল পর্যায়ে ফুটবলে জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়। সে সত্যি খুব দারুণ খেলে। গোলকিপার ছাড়াও সে ফুটবলে বিভিন্ন স্থানে ভালো খেলে। আমাদের স্কুলে তার মতো একজন মেধাবী খেলোয়াড়কে পেয়ে আমরা গর্বিত। গরিব ঘরের সন্তান ইয়ারজান লেখাপড়াতেও বেশ ভালো। আশা করি, সে দেশের জাতীয় দলে সুযোগ পাবে এবং দেশের সুনাম বয়ে আনবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা