প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪ ০১:১৩ এএম
মিরাজে ব্যাটে তাকিয়ে শান্ত, তার দলের দিকে দৃষ্টি পুরো বাংলাদেশের— ছবি: বিসিবি
২০২৩ বিশ্বকাপ বাদ দিলে আগের বছরগুলোতে ওয়ানডেতে সেরা ফর্মে ছিল বাংলাদেশ। সেই ফর্মের ছন্দপতন গত বছরেই। হারানো ছন্দ ফিরে পাওয়ার লড়াই শুরু গত বছর নিউজিল্যান্ডে। কিউইদের মাটিতে প্রথম ওয়ানডে জিতে বিশ্বকাপ দুঃখ কিছুটা ভুলতে পেরেছিল, তবে আক্ষেপ ঘোচেনি। এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ এবং তিনটি সিরিজ হারার পর এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারানো সুর ফেরানোর চ্যালেঞ্জ।
নাজমুল হোসেন শান্তদের সামনে সমীকরণও সোজা, জিতলেই মিলবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে শিরোপা। হারলে লঙ্কানদের কাছে খোয়াতে হবে আরেকটি ট্রফি। লম্বা হবে এক দিনের সিরিজ না জেতার তালিকা। সিলেটে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারলেও দল হিসেবে খেলার সক্ষমতা দেখিয়েছেন শান্তরা। চট্টগ্রামে ওয়ানডে সিরিজেও পেয়েছিল দাপুটে জয়। পরের ম্যাচে লড়াই জমালেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পেরে ওঠেনি।
আজ সোমবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচটি তাই এখন সিরিজ নির্ধারণীর। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লঙ্কানদের হারাতে শতভাগ প্রত্যয়ী বাংলাদেশ। দলের হয়ে গতকাল রবিবার মেহেদী হাসান মিরাজ তাই অকপটে বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই শতভাগ আশাবাদী। ম্যাচটা ইনশাআল্লাহ জিতব এবং আমরা সিরিজটা জিতব।’
বাংলাদেশের ভরাডুবি হয়েছিল ভারতের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপে। তা ছাড়া ২০২৩ সালের পর থেকে ৩২ ম্যাচ খেলে জিতেছে কেবল ১১টিতে। অথচ ওয়ানডে সংস্করণ ধরা হয় বাংলাদেশ দলের শক্তির জায়গা। সেই ওয়ানডেতেও বর্তমান পরিসংখ্যানের গ্রাফ নিচের দিকে। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল অবধি ৪৮ ম্যাচ খেলা বাংলাদেশ জিতেছিল ২৮ ম্যাচে।
২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর বাংলাদেশ হেরেছে তিনটি ওয়ানডে সিরিজ (আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড (দেশে ও দেশের বাইরে)। তবে পুরোনো কথা ভুলতে চান শান্তরা। সিরিজ শুরুর আগে যেমন টাইগার অধিনায়কের কণ্ঠে প্রত্যয় ঝরেছিল তেমনি মেহেদীও বললেন, নিজেদের পছন্দের ফরম্যাটে ভালো খেলার।
লঙ্কানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারানোর শোক ভুলে এখন ওয়ানডেতে নজর দেওয়ার পালা। সিলেটের ওই সিরিজে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত লড়েছিল কিন্তু পারেনি। টাইগারদের শক্তির ফরম্যাটে অবশ্য সেই শঙ্কা দেখছেন না মিরাজ। সাগরিকায় সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ম্যাচে ভালো খেলে সিরিজটা নিজেদের করে নিতে চান তিনি, ‘শেষ ম্যাচটা আমরা হেরেছি, আমরা তো জানি কন্ডিশন সম্পর্কে। যেহেতু দিনের ম্যাচ অবশ্যই একটা সুবিধা থাকবে আমাদের জন্য। রাতের খেলা নির্ভর করেছে টসের ওপর। যারা টস জেতে তাদের সুবিধাটা বেশি থাকে। অবশ্যই কালকের (আজকের) ম্যাচটা ভালো খেলার চেষ্টা করব।’
মিরাজের কণ্ঠে ঝরেছে পেস বোলারদের স্তুতি, ‘বোলিং নিয়ে যদি বলেন, আমাদের বোলাররা খুব ভালো বোলিং করছে। বিশেষ করে পেসাররা। প্রথম ম্যাচে পেসাররা ভালো শুরু পায়নি কিন্তু সাকিব যেভাবে বল করেছিল, সেটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে ১০ ওভারের মধ্যে পেসাররা ৩ উইকেট নিয়েছে। দলের জন্য অনেক সুবিধা ছিল। পরের ১০ ওভারে আমরা ব্রেকথ্রু আনতে পারিনি। জানেন যেন ডিউ ফ্যাক্টর অনেক গুরুত্বপূর্ণ, শিশির পড়ছিল, স্পিনাররা সুবিধা পায়নি। সব মিলিয়ে আমরা অনেক ভালো করছি, অনেক খুশি আমরা।’
সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শিশিরের প্রভাব ছিল। শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাটিং করে ২৫৫ রান করে। সেই রান সহজেই ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। লঙ্কানরা পরে বোলিং করে শিশিরের কারণে সমস্যায় পড়েছিল। গত ম্যাচেও পরে বোলিং করা দলের একই অবস্থা। তবে দ্বিতীয়বার ভোগে শান্তরা। আগে ব্যাটিং করে লঙ্কানদের ২৮৭ রানের লক্ষ্য দেয়। সেটিও সহজেই ছুঁয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। তৃতীয় ম্যাচটি হবে দিনে। সন্ধ্যার মধ্যেই খেলা শেষ হয়ে যাবে। ফলে শিশির নিয়ে ভয় নেই কারও। তবে লঙ্কানরা সফরে আরেকটি সিরিজ জিততে মরিয়া হয়ে আছে।
সিরিজের পাশাপাশি খেলোয়াড় খোঁজার মাঝেও আছে লঙ্কানরা, পরিকল্পনা সাজাচ্ছে ২০২৭ বিশ্বকাপ নিয়েও। দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষে লঙ্কানদের ব্যাটিং কোচ থিলিনা কান্দাম্বে বলেছিলেন, ‘আরও ৩ বছর আছে পরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের। আমি নিশ্চিত নির্বাচকদের প্ল্যান রয়েছে। যদি প্ল্যানিং ঠিকঠাক থাকে তাহলে পরের বিশ্বকাপে দেখা যাবে অন্তত ৪-৫ জন থাকবে যারা ১০০ ওয়ানডে খেলেছে। সর্বশেষ বিশ্বকাপে এটি হয়নি। আমাদের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দরকার।’
২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে বাংলাদেশের সামনে আছে কেবল ৬টি ওয়ানডে। জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনটি ও বছরের শেষদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিনটি। আজ ঘরের মাটিতে শক্তির ফরম্যাটে তাই নিজেদের ফিরে পেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মিরাজরা। সিরিজ জয় তো আছেই, সঙ্গে হারানো সুর ফিরে পাওয়াটাও বাংলাদেশের জন্য এখন প্রাণের দায়।