পঞ্চগড় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৮:০৫ পিএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৯:৪৬ পিএম
চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী অনূর্ধ্ব ১৬ নারী ফুটবলার ইয়ারজান বেগমকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। প্রবা ফটো
নিজ জেলা পঞ্চগড়ে ফিরে সবার ভালোবাসা ও ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী অনূর্ধ্ব ১৬ নারী ফুটবলার ইয়ারজান বেগম।
শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামে ফেরেন তিনি। এ সময় স্থানীয়রা ফুল ছিটিয়ে এবং ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেয় তাকে। সাফ জয়ী অনূর্ধ্ব ১৬ কাপ জয়ী হওয়ার দীর্ঘ তিন মাস পরে বাসায় ফেরেন তিনি। মেয়েকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মা রেনু বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা। সন্তানকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান মা রেনু। পরে ইয়ারজান তার মা-বাবা, দাদা-দাদি ও তার ফুটবল কোচের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেন। নিজ এলাকায় ফিরে স্থানীয়সহ স্বজনদের এমন ভালোবাসায় মুগ্ধ ইয়ারজান।
ইয়ারজান বেগম বলেন, ‘সাফ খেলার পরে প্রথম বাসায় আসলাম। অনেক দিন পর সবাইকে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। আমি কখনই কল্পনা করিনি আমার বাসায় এতো লোক এসে আমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাবে। আমি সবার ভালোবাসা পেয়ে আনন্দিত। সবার কাছে দোয়া চাই, আমি যেন আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারি। সবাই আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আমি ক্লাব লিগে খেলার জন্য সিরাজ ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। আপাতত সেখানে খেলব।’
ইয়ারজানের মা রেনু বেগম বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর মেয়েকে কাছে পেলাম। আমার মেয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো খেলেছে। আমি সবার কাছে আমার মেয়ের জন্য দোয়া চাই। সে যেন আগামীতে ভালো খেলতে পারে।’
ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কারও সন্তান যদি দীর্ঘদিন বাইরে থাকে তার যে কি বেদনা যার সন্তান আছে সেই বুঝে। তিনটা মাস মেয়ে আমার দূরে ছিল। আজ বাসায় ফিরছে। তাকে পেয়ে আমরা আনন্দিত। দেশের হয়ে আমার মেয়ে খেলেছে। আমার মেয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। সে যেন জাতীয় দলের হয়ে খেলে দেশের সুনাম বয়ে নিয়ে আসতে পারে।’
ইয়ারজানের কোচ ও টুকু একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক টুকু রেহমান বলেন, ‘সারা দেশ জানে ইয়ারজান যে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো খেলছে। সে বাংলাদেশকে একটি ট্রপি এনে দিয়েছে। সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পেয়েছে। এটা আমি টুকু ফুটবল একাডেমি ও পঞ্চগড়ের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই। আপনারাও আপনাদের সন্তানদের ফুটবল প্রশিক্ষণে পাঠান। তারাও যেন ভালো খেলোয়াড় হয়ে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারে।’
এদিকে ইয়ারজানের বাসায় ফেরার খবর পেয়ে শনিবার সকাল থেকে তার বাসায় আসতে শুরু করেন শত শত স্থানীয় লোকজন। ইয়ারজানের সঙ্গে দেখা করতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেন তারা। ইয়ারজান বাসায় পৌঁছার পর পরই পুরো বাড়িতে মানুষে ভরে যায়। পরে ইয়ারজানের প্রতিবেশীসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। ইয়ারজানের সাফল্যে খুশি স্থানীয়রাও।
হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নুর ই আলম বলেন, ‘আমাদের এ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ইয়ারজান দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে। এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাই টুকু ফুটবল একাডেমিকে যারা তাকে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে এমন খেলোয়াড় হিসেবে তৈরি করেছেন। ইয়ারজান তার মেধার পূর্ণ বিকাশ ঘটিয়েছে। এজন্য সে খেলায় ভালো করেছে। তার জন্য শুভকামনা রইল।
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইয়ারজানসহ সাফজয়ী অনূর্ধ্ব ১৬ এর চার নারী ফুটবলারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার আয়োজন করব। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইয়ারজানের জন্য একটি পাকা ঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নির্মাণ করে দিচ্ছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃতি খেলোয়াড়দের জন্য শুভকামনা।
গত ১০ মার্চ নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব ১৬ এর ফাইনাল খেলায় ভারতকে পেনাল্টিতে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।