আরিফুর রাজু
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪ ১৯:০৬ পিএম
সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়ে থেমেছেন দিমুথ করুণারত্নে
ইনিংসে ৫০০ ঊর্ধ্ব রান। অথচ ব্যক্তিগত শতক নেই। শতকের ঘ্রাণও পেয়েছেন
বেশ কয়েকজন ব্যাটার। তবে নাগাল পাননি তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগার। স্বাগতিক বাংলাদেশের
বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যাটারদের ডানায় উড়ছে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে সফরকারীদের
সংগ্রহ ৫৩১ রান। আকাশছোঁয়া ইনিংসে ছয়টি অর্ধশতক। নেই একটিও শতক। টেস্টে এটিই সেঞ্চুরি
ছাড়া সর্বোচ্চ দলীয় রান।
ফিফটির মিছিলে সর্বোচ্চ রান কুশল মেন্ডিসের। ১১ চার ও এক ছক্কায় সাজান
৯৩ রানের ইনিংস। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কামিন্দু মেন্ডিসের। টানা তৃতীয় ইনিংসে তার হ্যাটট্রিক
সেঞ্চুরির আশা থেমেছে ৯২ রানে। শেষ অর্থাৎ ১১ নম্বর ব্যাটার আসিথা ফার্নান্দো রান আউট
হলে সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে থামেন কামিন্দু।
কোনো দলের এক ইনিংসে রান পাঁচশ ছাড়িয়েছে, অথচ একজন ব্যাটারও শতক পাননিÑ
এমন ঘটনা টেস্ট ইতিহাসে ঘটেছে ছয়বার। চলতি চট্টগ্রাম টেস্ট মনে করিয়ে দিচ্ছে চার যুগ
আগের কীর্তি। ১৯৭৬ সালের কানপুরে নিউজিল্যান্ডকে আতিথেয়তা দেয় ভারত। স্বাগতিকরা প্রথম
ইনিংসে সংগ্রহ করে ৫২৪ রান। ব্যক্তিগত শতক ছাড়াই তারা গড়ে রানের পাহাড়। ওই ইনিংসে সর্বোচ্চ
ব্যক্তিগত সংগ্রহ ৭০। খেলেছিলেন আংশুমান গায়কোয়াড়। ড্রয়ে শেষ হয় ম্যাচটি।
দ্বিতীয়টি ১৯৯৮ সালে, অ্যাডিলেডে। অস্ট্রেলিয়া আতিথেয়তা দেয় দক্ষিণ
আফ্রিকাকে। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে সফরকারীদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫১৭। ম্যাচটি গড়িয়েছিল
শেষ দিন পর্যন্ত। এই ম্যাচের ফলও ড্র। ম্যাচে পাঁচটি অর্ধশতক ছিল। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস
ছিল ব্রেইন ম্যাকমিলানের। তিনি ৮ নম্বরে নেমে করেছিলেন ৮৭ রান।
তৃতীয়টি মেলবোর্নে, ১৯৮১ সালে। সেবার ঘরের মাঠে বোকা বনে যায় অস্ট্রেলিয়া।
পাঁচশ রানের ভার চাপিয়ে ইনিংস ব্যবধানে জেতে সফরকারী পাকিস্তান। ছয়টি অর্ধশতকের ইনিংসের
দুটিই ৯০ ঊর্ধ্ব। ডেনিস লিলির হাতে কট আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের ওপেনার মুদাসসর
নজার তো সেঞ্চুরি ছুঁয়েই ফেলছিলেন। পাঁচ রানের আক্ষপে পোড়েন মুদাসসর। জহির আব্বাসের
ইনিংসটিও ছিল ৯০ রানের।
সেঞ্চুরি ছাড়াই এক ইনিংসে পাঁচশ রানের কাছাকাছি স্কোর তোলার কীর্তি
আছে বাংলাদেশেরও। ২০০৬ সালে চট্টগ্রামে টাইগারদের প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। টস জিতে
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে তোলে ৪৮৮ রান। চারজন ব্যাটার পেয়েছিলেন অর্ধশতক। এক এবং দুই
রানের জন্য অর্ধশতক হাতছাড়া করেন খালেদ মাসুদ (৪৯) এবং মাশরাফি বিন মর্তুজা (৪৮)।
১৯৯৭ সালে নাগপুর টেস্টের কথা আলাদাভাবে আলোচিত। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটিতে
খেলা হয়েছিল এক ইনিংস। ফিল্ডিংয়ে নেমে চোখে সর্ষে ফুল দেখেছিল শ্রীলঙ্কার। ৪৮৫ রানের
ইনিংসটিতে ছিল পাঁচটি অর্ধশতক। ৯০ ঊর্ধ্ব ইনিংস দুটি। আফসোসে পুড়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি।
৩০৯ মিনিট ক্রিজে টিকে ৯৯ রান করেছিলেন সৌরভ। ৯২ রান ছিল দ্য ওয়াল খ্যাত রাহুল দ্রাবিড়ের।
২০০০ সালের ২ মার্চ। বেঙ্গালুরুতে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হয় শচিন
টেন্ডুলকারের নেতৃত্বাধীন ভারত টিম। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ম্যান ইন ব্লুজরা জিতলেও সিরিজের
দ্বিতীয় টেস্টে বড় লজ্জা পায় ভারত। সফরকারীদের কাছে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল ভারত। ব্যাটারদের
ব্যর্থতায় প্রথম ইনিংসে ১৫৮ রান তোলে স্বাগতিকরা। দুই অঙ্কের রান ছুঁলেও অর্ধশতক পাননি
কোনো ব্যাটার। জবাবে প্রোটিয়ারা তোলে ৪৭৯ রান। পাঁচটি অর্ধশতক ছিল এই ইনিংসে। ৯৭ এবং
৯৫ রানের ব্যক্তিগত ইনিংসও ছিল তাতে।
সাদা পোশাকের প্রথম ইনিংসে বড় স্কোরের ফল সাধারণত দুদিকে গড়ায়। ড্র অথবা ইনিংস ব্যবধানে হার-জিত। দুই দিনে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্টের ভবিষ্যৎ এখনও বলা যাচ্ছে না। দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে স্বাগতিকদের (৫৫/১) ব্যাটিং দেখে অনুমানও করা যাচ্ছে না। পাঁচশর ভার মাথায় নিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তরা কতদূর এগোতে পারে, সেটিই এখন দেখার ব্যাপার।