চট্টগ্রাম টেস্ট
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ২১:১৮ পিএম
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ২১:১৮ পিএম
আরেকটি হারের অপেক্ষায় বাংলাদেশ— গেটি ইমেজেস
চতুর্থ দিন শেষে দল বড় হারের অপেক্ষায়। এমনি অবস্থায় মঙ্গলবার আক্ষেপ ঝরল মুমিনুল হকের কণ্ঠে। লম্বা সংবাদ সম্মেলনে টাইগার ব্যাটার একে একে শোনান ঘরোয়া ক্রিকেট এবং আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচের বাস্তবতা, তরুণদের টেস্টের প্রতি আগ্রহ এবং নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতার কথা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের একমাত্র ফিফটি করা ব্যাটার আরও বলেছেন, টেস্ট খেলার ধরনটাই ঠিক নেই তাদের। সব মিলিয়ে ব্যর্থতার কোনো ব্যাখ্যা নেই মুমিনুলের কাছে, অভিযোগ দেওয়ারও সুযোগ দেখছেন না।
চতুর্থ দিন শেষে হতাশ মুমিনুল বলেছেন, ‘এভাবে টেস্ট ম্যাচ হয় না। আজকে একদিন কালকে একদিন এভাবে হয় না। এক ঘণ্টা এক ঘণ্টা করে খেলতে হয়। অল্প অল্প করে টার্গেট করে খেলতে হয়। এক সেশন দুই সেশন এভাবেই চেষ্টা করি। আজকেও (গতকাল) এভাবেই ছিল।’
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে লঙ্কানদের ছোড়া ৫১১ রানের লক্ষ্যে প্রথম ইনিংসের চেয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে তুলনামূলকভাবে ভালোই করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে সবশেষ ছয় ইনিংসের পাঁচটিতেই দুইশ রান পেরোতে পারেনি টাইগাররা। সাগরিকায় গতকাল চতুর্থ দিনে সেই গেরো খুলেছে বটে তবে তা বড় হার এড়ানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
খেলা পঞ্চম দিনে গড়ালেও ৭ উইকেট চলে যাওয়ায় আরেকটি বড় হারই চোখ রাঙাচ্ছে টাইগারদের। স্পষ্ট করে বললে, ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়া বাংলাদেশের জন্য এখন কেবলই সময়ের ব্যাপার। জয়ের জন্য সামনে থাকা কঠিন সমীকরণ মেলানো তাদের জন্য শুধু কঠিনই নয় অসম্ভবও। হাতে স্রেফ ৩ উইকেট নিয়ে দরকার আরও ২৪৩ রান। ক্রিজে স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে ৪৪ রান করে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাকে ১০ রানে সঙ্গ দিচ্ছেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম।
তার আগে চট্টগ্রামে নাজমুল হোসেন শান্তদের উপাখ্যানে শুধুই ব্যর্থতা। পাঁচশ রানের বোঝা মাথায় নিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিল যেখানে বড় কয়েকটি জুটি গড়া, ক্রিজে টিকে থাকা— সেখানে আসা-যাওয়া আর উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার মিছিলেই ছিলেন স্বাগতিক ব্যাটাররা। বাজে শট খেলে ২৪ রান করে ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয়, একই পথ ধরেন আরেক ওপেনার জাকির হাসান। তার নামের পাশে ১৯ রান। অধিনায়ক শান্তর ব্যাট থেকে আসে ২০ রান। মুমিনুল হক খেলেছেন একমাত্র ফিফটি ছাড়ানো ইনিংস। সাকিব এবং লিটনের ৬১ রানের জুটিই ইনিংসের সেরা। সাকিব ৩৬ রান করেন আর লিটন ফিরেছেন ৩৮ রান করে। দুজনই আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটু শট খেলে। বাকিদের অবস্থাও ছিল একই। অপ্রয়োজনীয় এবং অহেতুক ঝুঁকি নিতে গিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন একে একে।
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে স্রেফ ১৭৮ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। দলটির এমন ব্যর্থতার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না অভিজ্ঞ ব্যাটার মুমিনুল, ‘এই সিরিজে ধরেন আমাদের ব্যাটিং পুরোপুরি ধসে গেছে। এটার কোনো অজুহাত নেই। আমরা কোনো অজুহাত দিতেও পারব না। আসলে খুব বাজে ব্যাটিং করছে পুরো দল। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যাটিং করা দরকার।’ এই টপ অর্ডার ব্যাটার, ‘পুরো দিন মনে হয় যদি ৪ উইকেটে শেষ করতে পারতাম তাহলে হয়তো কালকে (আজ) ভিন্ন কিছু হতে পারত। তখন রান হয়তো ৩০০ হতো, রানরেট আরও বেশি থাকত। কালকের (আজ) দিনে অন্য কিছু হতে পারত। উইকেট খুব তাড়াতাড়ি পড়েছে। বেশিরভাগই একইভাবে আউট হয়েছে, আমি নিজেও। এটা সবার দায়।’
বাংলাদেশকে সাদা পোশাকের সিরিজে হোয়াইটওয়াশের সামনে রেখে যারপরনাই খুশি লঙ্কান কোচ ক্রিস সিলভারউড। সিলেটে তিন পেসার লাহিরু কুমারা, বিশ্ব ফার্নান্দো ও কাসুন রাজিথা মিলে ১০ উইকেট পেয়েছিলেন। সিলেটের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা চট্টগ্রামেও টেনে এনেছেন তারা। দলের পেসারদের এমন সাফল্যে বেশ খুশি লঙ্কান কোচ, ‘আমরা এই সিরিজে দুর্দান্ত খেলেছি। ছেলেরা নিজেদের সামর্থ্য ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। হৃদয় দিয়ে খেলেছে ছেলেরা। তাদের লক্ষ্য এবং সামর্থ্য দেখিয়েছে। তারা দ্রুত মানিয়ে নিতে পেরেছে। ছেলেরা এখনও উন্নতি করছে। আরও কিছু শিখতে হবে। প্রতিটা সিরিজেই তারা উন্নতি করছে।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৫৩১/১০
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৭৮/১০
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস: (আগের দিন ১০২/৬) ৪০ ওভারে ১৫৭/৭ (ডি.) (ম্যাথিউস ৫৬, জায়াসুরিয়া ২৮*, ভিশ্ব ৮*, খালেদ ৩৪/২, হাসান ৬৫/৪, সাকিব ৩৯/১)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: (চতুর্থ দিন শেষে*) ৬৭ ওভারে ২৬৮/৭ (জয় ২৪, মুমিনুল ৫০, লিটন ৩৮, মিরাজ ৪৪*, তাইজুল ১০*, লাহিরু ৪১/২, জায়াসুরিয়া ৭৯/২, কামিন্দু ২২/২)