প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৩৫ পিএম
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৫২ পিএম
ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে একই প্রশ্ন। ব্যর্থতার কারণ কী। উত্তর সহজাত—অকার্যকর ব্যাটিং, বোলিংয়ে দৈন্যদশা, ক্যাচ মিস আর...। আরও অনেক কিছুই! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নাজমুল হোসেন শান্তদের স্রেফ ভরাডুবি। সাদা পোশাকের ম্যাচে লড়াই তো দূরের কথা, শিরদাঁড়া টান করে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। সিলেট টেস্টে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স। চট্টগ্রামে ফেরার বদলে টাইগাররা এনেছে দ্বিগুণ হতাশা।
সংবাদ সম্মেলনে বুধবার (৩ এপ্রিল) বড় হারের কারণে সাদামাটা উত্তরে সমাধান খুঁজেছিলেন শান্ত। চট্টগ্রাম টেস্টের পর বাংলাদেশ দলপতির কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল ফিল্ডিং ও ক্যাচ প্রসঙ্গে। শান্তর সহজ স্বীকারোক্তি, ‘অনুশীলনে সবাই প্রত্যেকটা ক্যাচও নেয়। মাঠে কেন হয়েছে উত্তর নেই। তবে ফিল্ডিংয়ের প্রস্তুতির কথা যদি বলি, তাহলে বলব সবাই প্রস্তুত ছিল। কিন্তু ক্যাচগুলো নিতে পারিনি।’
ক্যাচ মিস ও বাজে ফিল্ডিং—এ সেক্টরে টাইগারদের অসহায়ত্ব চোখে পড়ার মতোই। এ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক ট্রল হয়েছে। সহজ ক্যাচ কঠিন করে তোলা—ফেলে দেওয়া। স্লিপ গলিয়ে যাওয়া বাউন্ডারি বাঁচাতে পাঁচজনের ভোঁ দৌড়, যা অনেকের কাছে ছিল হাস্যকর। ফ্রেন্ডলি উইকেটে ব্যাটিং বিপর্যয়। আসা-যাওয়ার মিছিল। এসব নিয়েও কম সমালোচনা হচ্ছে না। যে উইকেটে ব্যাটিং করা সহজ মনে হচ্ছিল, তাতে আরও ভালো ব্যাটিংয়ের প্রত্যাশা ছিল স্বাগতিকদের কাছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক নিজেও ছিলেন ছন্নছড়া। দুই টেস্টের কোনোটিতেই বড় স্কোর পাননি। লিটন দাস, শাহাদাত হোসেন দিপু, জাকির হাসান, মুমিনুল হক—দীর্ঘ ব্যাটিং লাইনআপের বেশিরভাগেরই ব্যাট হাসেনি।
ব্যাটিংয়ের ভঙ্গুর দশা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন মুমিনুল ইসলাম। প্রশ্ন তুলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নিয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাবের কথা বলেছেন। নাজমুলেন কণ্ঠেও একই সুর, ‘আমাদের ব্যাটাররা থিতু হয়েছে। কিন্তু বড় স্কোর পায়নি। এটা চিন্তার বিষয়। আপনি থিতু হলে আপনাকে স্কোর করতে হবে। আমাদের আরও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে হবে।’
দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ‘১’ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ২০। প্রথম টেস্টেও একই চিত্র। সিলেটে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১১ রান। নাজমুল যেন একেবারেই শান্ত। দলের নেতা হিসেবে ‘দায়িত্বহীন’ পারফরম্যান্স হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। বিষয়টি অবশ্য মাথা পেতে নিয়েছেন। শান্তর দাবি, নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারেননি ব্যাটাররা, ‘পুরো সিরিজে আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি। অজুহাত দেওয়ার সুযোগ নেই। অনেক কথা বলা যেতে পারে। কিন্তু দল হিসেবে আমরা দুই ম্যাচের চার ইনিংসে ভালো ব্যাটিং করিনি। দলের হারের পর খারাপ লাগাটা কাজ করে এবং কীভাবে এটা আরও ভালো করতে পারে দলের জন্য সেটা সব
সময় প্রত্যেকটা প্লেয়ারের মধ্যে থাকে।’
সিরিজজুড়ে পাইপলাইনের বেশিরভাগ ব্যাটার দৃষ্টিকটু শট খেলে আউট হয়েছেন। এক্ষেত্রে ‘অনভিজ্ঞতার’ বিষয়টি তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘একদমই তরুণ দল। বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড় খেলেছে দলে। খুব বেশি অভিজ্ঞ না। খেলতে খেলতে হয়তো ওই অভ্যাসটা চলে আসবে। এখানে যারা আছে প্রত্যেকের ওই ইচ্ছাটা আছে। আগ্রহ আছে কীভাবে আরও বেটার ক্রিকেটটা খেলতে পারে। আমার মনে হয়, আরও সময় গেলে এই দলটা আস্তে আস্তে ভালোভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’
সিলেটে ৩২৮ রানের হার। চট্টগ্রামেও একই পরিণতি। ব্যাটিং ব্যর্থতায় এই টেস্টে স্বাগতিকদের হার ১৯২ রানে। ঘরোয়া ক্রিকেটে টানা সাদা বলের ক্রিকেট খেলে টেস্ট খেলতে আসায় ব্যাটারদের প্রস্তুতিটা আদর্শ হয়নি। নাজমুল অবশ্য আধুনিক ক্রিকেটের বাস্তবতায় ক্রিকেট সূচিকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চান না, ‘এটা একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু এই কথাটা আমি বলতে চাই না। কারণ বর্তমান সময়ে যে রকম খেলা চলছে, আমাদের এগুলো মানিয়েই খেলতে হবে। হ্যাঁ, যারা তিন ফরম্যাট খেলে না তাদের হয়তো প্রস্তুতি একটু নেওয়ার সুযোগ থাকে। এখন সামনে যত খেলাই আছে আমাদের, এভাবেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। এভাবেই আমরা তিন সংস্করণে কীভাবে মানিয়ে নিয়ে খেলতে পারি সেই চিন্তা করে অনুশীলন, প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।’
বাজে পরিস্থিতি উত্তরণের পথ হিসেবে মানসম্পন্ন ম্যাচ খেলার মাধ্যমে নিজেদের উন্নতির বিকল্প দেখেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘আমার কাছে এখনও মনে হয় আমরা যে রকম চ্যালেঞ্জ এখানে (আন্তর্জাতিক) মোকাবিলা করি, ওই রকম কোয়ালিটি ম্যাচ সেখানে (প্রথম শ্রেণি) আমরা খেলতে পারি না। আমাদের খেলোয়াড়রা যদি আরও ম্যাচ খেলতে পারে আন্তর্জাতিকের সঙ্গে, তাহলে অবশ্যই ভালো হবে। যত বেশি ম্যাচ খেলব, কিছু না কিছু তো উন্নতির জায়গা থাকেই।’