টেস্ট ক্রিকেটে দৈন্যদশা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৪০ এএম
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাজে পারফরম্যান্সের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ছেন
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে শোচনীয়ভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। সিলেট টেস্টে স্বাগতিকরা ৩২৮ রানে হারের পর চট্টগ্রাম টেস্টে হার ১৯২ রানে। হারের চেয়ে বেশি চোখে লেগেছে কিন্তু নাজমুল হোসেন শান্তদের লড়াই করতে না পারার মানসিকতা। অকার্যকর ব্যাটিং, বোলিংয়ে দৈন্যদশা, সহজ ক্যাচ মিসে ক্ষুব্ধ টাইগার সমর্থকরা।
এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ ক্রিকেটাররাই, যা নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। টেস্টে উন্নতির জন্য প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মানোন্নয়নে চোখ টিম নির্বাচকের। একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কা সিরিজের পারফরম্যান্সও মূল্যায়ন করবে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এই সংস্থাটি।
বিপিএলের পরপরই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে টানা সীমিত ওভারের ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা। সে কারণে সাদা পোশাকে খেলার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিলেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন সংবাদ সম্মেলনে টাইগার সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকও স্বীকার করেন যে, দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলা এবং আন্তর্জাতিকের খেলা আকাশ পাতাল তফাত। তার কথায়, আমিও জানি, সবাই জানে। আমি নিজেও তো জাতীয় লিগ খেলি, আমি নিজেও কখনও চ্যালেঞ্জ ফেস করি না।’ হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর অধিনায়ক শান্তর কণ্ঠেও ছিল একই সুর, ‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উইকেটটা যদি আরেকটু বেটার হয়, যেরকম কন্ডিশনে আমরা খেলব চ্যালেঞ্জগুলো যদি ফেস করতে পারি তাহলে ভালো হয়। যত বেশি ম্যাচ খেলব কিছু না কিছু তো উন্নতির জায়গা থাকেই।’
এমন বাস্তবতায় ক্রিকেটারদের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুও, ‘আমার বিশ্বাস, ঘরোয়া ক্রিকেটেও এরকম উইকেটে খেলা হবে। একইভাবে খেলোয়াড়দেরও নিজেদের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন ক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে শট নির্বাচনে পারদর্শী হতে হবে তাদের। বল ছাড়ার অভ্যাসটা করতে হবে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেই।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ত থাকায় জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা খুব একটা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পান না। সমন্বয় করে হলেও জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের প্রথম শ্রেণির লিগে খেলার পক্ষে লিপু, ‘টেস্টের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত হতে চাইলে বিসিএল খুবই উপযুক্ত জায়গা। বাছাইকৃত সেরা ৬০ ক্রিকেটার এখানে খেলে। আমরা টেস্ট সিরিজ থেকে যেটা উপলব্ধি করতে পারছিÑ অনুকূল কন্ডিশনে পেস বোলিং বিভাগ ভালো করে। ক্যাচ পড়ার কারণে তাদের সামর্থ্যের প্রকাশ সেভাবে ঘটে না। আমার বিশ্বাস, এই সিরিজ শেষে ক্রিকেটাররাও বুঝতে পেরেছে টেস্টে ভালো করতে হলে তাদের কী করতে হবে।’
বাংলাদেশের হারকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তিনি, ‘বিগত সাত-আট বছর দেশের মাটিতে আমরা যে ধরনের উইকেটে খেলে টেস্ট ম্যাচ জিতেছি, তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। এতে কৃত্রিম যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, তা টেস্ট ক্রিকেটের পারফরম্যান্স উন্নয়নে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পেরেছে বলে মনে হয় না। এবার সুষম প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। যেখানে আমরা সফল হতে পারিনি। তবে একটা লাভ হয়েছে, সামর্থ্যের জায়গাটা বোঝা গেছে।’
এদিকে লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্টে ব্যর্থতার জন্য ঈদের পর বিসিবি পর্যালোচনায় বসবে বলে জানিয়েছেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস, ‘আমাদের যে রিসোর্স আছে তাদের নিয়েই তো খেলতে হবে। আপনি এর বাইরে কীভাবে যাবেন। আমাদের প্লেয়ার যারা আছে, তারাই খেলছে এখানে। জাতীয় দলের প্লেয়ারদের সঙ্গে বাকিদের একটা তফাত থাকে। আমরা কিন্তু চেষ্টা করি মানসম্পন্ন প্লেয়ার খেলানোর, আমরা নজর দিচ্ছি সেদিকে। ঈদের পর নির্বাচক, কিছু প্লেয়ার, ক্রিকেট অপারেশন্স আমরা সবাই বসব। সেখানে (এই সিরিজ নিয়ে) রিভিউ করব।’ একই সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি, ‘ঘরোয়া টুর্নামেন্ট আগেও ছিল, এখনও আছে। আমরা চাই বেশিরভাগ প্লেয়ার যেন এনসিএল ও বিসিএল খেলে। জাতীয় দলে খেলার সূচি বেশ টাইট। এজন্য তারা সুযোগ পাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে এনসিএলে খেলার সময় সিরিজ চলছে। আমাদের দেখতে হবে বেশিরভাগ প্লেয়ার যদি সুযোগ থাকে, তারা যেন তা কাজে লাগায়।’
শ্রীলঙ্কা সিরিজে ক্রিকেটারদের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল কি না প্রশ্নে জালালের জবাব, ‘প্রস্তুতি বলতে কী বুঝাচ্ছেন। প্রস্তুতির জন্য জাতীয় লিগ ছাড়া সুযোগ নেই, কারণ সিরিজের পর সিরিজ হতে থাকে। আপনি দেখেন কোন প্লেয়ার সময় পায় বেশি টেস্ট খেলার? এই সুযোগটা নেই। সিরিজ হলে টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি থাকে। জাতীয় দলের প্লেয়ার হিসেবে অ্যাডজাস্ট করেই খেলতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবারও আমাদের ‘এ’ দলের প্রোগ্রাম আছে। তারা পাকিস্তান যাবে, আবার পাকিস্তান দল আসবে এখানে। নিউজিল্যান্ডও আসবে। ভালো হতো যদি ইন্ডিয়া সিরিজের আগে খেলতে পারত। কিন্তু সেভাবে সুযোগ পাওয়া যায় না। এখন সুযোগ বের করা বেশ কঠিন।’