× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ময়মনসিংহ মোহামেডানের সম্বল শুধু ঐতিহ্য!

রুবেল রেহান

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:১৮ এএম

ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠের পাশে টাউন হল মোড়ে দাঁড়িয়ে ময়মনসিংহ মোহামেডান। প্রবা ফটো

ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠের পাশে টাউন হল মোড়ে দাঁড়িয়ে ময়মনসিংহ মোহামেডান। প্রবা ফটো

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের শতবর্ষী ক্লাবগুলোর সোনালি অতীত হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে। ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার দায়ও অনুভব করেননি কেউ। শতবর্ষী ক্লাবগুলোকে নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশের পাঁচ পর্বের ধারাবাহিক আয়োজনের আজ চতুর্থ পর্ব।

ময়মনসিংহ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। পণ্ডিতপাড়ার আর দশটা ক্লাবের মতোই সাদামাটা। তবে ইতিহাস ঐতিহ্যে অন্য সবার চেয়ে আলদা। দোতলা ভবনের মেইন গেট ডিঙিয়ে ঢুকলে সিঁড়ির ডান কোণে মোটামুটি বড় এক হলরুম। যেটি খেলোয়াড়দের জন্য উন্মুক্ত। হলরুমের দেয়ালে সাঁটানো পুরোনো দিনের ছবি। যা বহন করছে ক্লাবের ঐতিহ্য আর পুরোনো ভাবগাম্ভীর্য। একটি ছবি ১৯৬৭ সালের। ময়মনসিংহ হকি লিগ চ্যাম্পিয়ন দলের। হলরুমের নিচতলায় আরও তিনটি কক্ষ। খেলোয়াড়দের বিশ্রামাগার হিসেবেই ব্যবহার হচ্ছে সেগুলো। ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি হকিতে সবশেষ চ্যাম্পিয়ন হয় ২০০৯ সালে। এরপর থেকেই ছন্নছাড়া। ক্রিকেট ও ফুটবলÑ দুই ডিসিপ্লিনেই ভঙ্গুর দশা। ঐতিহ্য বিলুপ্তির শঙ্কায় এখন ক্লাবটি। টিকে আছে কায়ক্লেশে। ক্লাব কর্ণধারদের ভাষায়, এই ঐতিহ্যই যেন ক্লাবটির সবচেয়ে বড় দায়! 

ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠের পাশে টাউন হল মোড়ে দাঁড়িয়ে ময়মনসিংহ মোহামেডান। এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মোহামেডানের ৩৮ বছর আগে অর্থাৎ ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবই দেশের অন্যতম প্রাচীন ফুটবল ক্লাব। সাধারণত প্রাচীনতম ক্লাব বললে সবার আগে আসে ঢাকার ওয়ারী ক্লাবের নাম। এই ক্লাবটিও একই বছর প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেকের মতে, ১৮৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়েলিংটন ক্লাবই পরবর্তীকালে ১৮৯৮ সালে ওয়ারী ক্লাব নামে আত্মপ্রকাশ করে।

ময়মনসিংহ মোহামেডানের প্রতিষ্ঠাতা কে বা কারা সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। ইতিহাস সংরক্ষিত নেই ক্লাবেও। ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল আলমের মতে, মোহামেডান ক্লাবের সঙ্গে মুসলিম জাগরণের একটা সংশ্লিষ্টতা আছে। তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ-ভারতের এই অঞ্চলের মুসলমানরা যখন নিষ্পেষিত, অসহায় ছিল, তখনই মুসলমানদের একজোট করতে এবং বিনোদিত করতে এই ক্লাব গঠিত হয়। তবে কে বা কারা ময়মনসিংহ মোহামেডান গঠন করেছেন সেটি নির্দিষ্ট করে জানা নেই।’ ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোকে জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে কোনো প্রকার সহায়তা করা হয় কি না জানতে চাইলে এহতেশামুল আলম বলেন, ‘সেটার সুযোগ কোথায়? আমরা তো লিগ চালাতে, মাঠে খেলা রাখতেই হিমশিম খাচ্ছি।’

ময়মনসিংহ মোহামেডানে আজীবন সদস্য হতে এককালীন ১০ হাজার টাকা ক্লাবের ফান্ডে দিতে হয়। কিন্তু সেটি নিতেও আগ্রহ নেই তেমন কারও। যে কারণে আজীবন সদস্যের তালিকা খুব একটা লম্বাও হয়নি। কেউ আবার আজীবন সদস্যপদ নিয়ে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন কয়েক কিস্তিতে। ক্লাব চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বর্তমান কমিটিকে।

যদিও কমিটি নেই অনেক দিন ধরে। ১৯৯৭ সাল থেকে ক্লাবের সভাপতি হিসেবে ছিলেন সাবেক জ্বালানিমন্ত্রী এ.কে.এম মোশাররফ হোসেন। ২০২০ সালের অক্টোবরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যাওয়ার পর আর কমিটি দেওয়া হয়নি। অধ্যাপক এ.কে.এম শফিকুল ইসলাম ২০০৭ সাল থেকে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের পদে আছেন। সভাপতির মৃত্যুর পর এক প্রকার একাই ক্লাবকে টেনে নিচ্ছেন। তিনি বর্তমানে অসুস্থ। কথা বলে জানা যায়, পায়ের গোড়ালির ব্যথার কারণে ক্লাবে আসতে পারেন না নিয়মিত। 

১৯৫৩ ও ১৯৫৪ সালে আন্তঃজেলা ফুটবল টুর্নামেন্টে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয় ময়মনসিংহ জেলা। যেখানে অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ছিল ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহ মোহামেডান ক্লাবের।

বর্তমানে ময়মনসিংহ মোহামেডানের ট্রেজারার এবং ফুটবল বিভাগের প্রধান এ.কে.এম মাহবুবুল আলম। ১৯৮৮ সাল থেকে ক্লাবের সঙ্গে আছেন তিনি। একটা সময় নিজে টানা ১৪ বছর খেলেছেন এই ক্লাবে। খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই ক্লাবের দায়িত্ব নেন ট্রেজারার হিসেবে। ক্লাবটির আর্থিক দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে মাহবুবুল আলম বলেন, ‘পুরোটাই অর্থনৈতিক চাপ। তা ছাড়া আমরা বিরোধীদলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। খেলাধুলা লস প্রজেক্ট। এখানে বিনিয়োগের মতো কেউ নেই। আগে তাও আয়ের একটা পথ ছিল। দোতলায় কার্ড রুমে খেলা হতো। তা থেকে কিছু টাকা আসত। কিন্তু সেটি এখন বন্ধ। যে কারণে চার-পাঁচ বছর ধরে আমরা খুঁড়িয়ে চলছি।’ গড়ে বার্ষিক ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ হয় ক্লাবের। আয়ের উৎস বলতে ক্লাবের সঙ্গে থাকা দুটি গ্যারেজ। সেটি থেকেও মাসে ভাড়া আসে মোটে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। মাহবুবুল আলম কার্ড রুম বন্ধ আছে জানালেও সরেজমিনে দেখা গেছে, দোতলায় কার্ড খেলছেন কয়েকজন। সেটি থেকে প্রতিদিন এক হাজার টাকার মতো আসে। যদিও ঝাড়ুদার এবং অফিস সহকারীর বেতনও হয় না। তারপরও ক্লাবকে চালিয়ে নিচ্ছেন সংগঠকরা। ভালোবাসা আর মায়ার টানে। অনেকটা যেন ঐতিহ্যের দায়েই ক্লাবটিকে লড়াই করে টিকিয়ে রাখছেন এর কর্মকর্তারা।

ময়মনসিংহ মোহামেডানের ফুটবল বিভাগের প্রধান এ.কে.এম মাহবুবুল আলম। প্রবা ফটো

একসময় দাপট ছিল ময়মনসিংহ মোহামেডানের। কিংবদন্তি অনেক খেলোয়াড়ই খেলেছেন এই ক্লাবের হয়ে। এই ক্লাবের হয়ে খেলা ক্রিকেটার সদরুল আনাম, মাহবুবুর রহমান সেলিম আশির দশকে খেলেছেন জাতীয় দলেও। সত্তর থেকে আশির দশকে ফুটবলে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, মাহমুদুল হাসান, দুই ভাই হেলিম ও রাজ্জাক খেলেছেন জাতীয় ফুটবল দলে। ৭০ দশকে প্রেসিডেন্ট কাপে তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে ইরানের বিপক্ষে গোল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন হাবিবুর রহমান বুলু। তিনিও খেলেছেন এই ক্লাবের জার্সিতে। বতর্মানে ঢাকা মোহামেডান ফুটবল দলের প্রধান কোচ এবং সাবেক খেলোয়াড় আলফাজ আহমেদও একটা সময় ছিলেন ময়মনসিংহ মোহামেডানের টেন্টে। এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, জাতীয় দলের হয়ে দুটি ওয়ানডে এবং ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলা পেসার আবু হায়দার রনি নেত্রকোণা থেকে এসে অনুশীলন করেছেন এই ক্লাবে।

১৯৬৮ সালে মোনেম খান গোল্ডকাপে ময়মনসিংহ স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল মোহামেডান-ইপিআইডিসি। ভারতের কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষেও একটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলে ময়মনসিংহ মোহামেডান। ১৯৩৮ সালের সেই ম্যাচের ফল ছিল ড্র। ১৯৫৩ ও ১৯৫৪ সালে আন্তঃজেলা ফুটবল টুর্নামেন্টে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয় ময়মনসিংহ জেলা। যেখানে অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ছিল ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবের।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা