বরগুনা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:১৫ এএম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:০০ পিএম
বরগুনার তালতলী উপজেলার নলবুনিয়ায় ‘শুভসন্ধ্যা’ সমুদ্রসৈকতে একই সঙ্গে উপভোগ করা যায় সাগর ও সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। প্রবা ফটো
একটু অবসর পেলেই মানুষ ঘুরতে-ফিরতে চায়। বাংলাদেশের মানুষের প্রথম পছন্দের জায়গা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। এরপর পাহাড়, বন ইত্যাদি।
দেশের এমনও জায়গা রয়েছে, যেখানে সাগরপাড়ে গিয়েও পাওয়া যাবে সুন্দরবনের স্বাদ। একই ভ্রমণে দুটি ভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমির নাম দেশের দক্ষিণের বরগুনা জেলার ‘শুভসন্ধ্যা’ সমুদ্রসৈকত।
সাগরের কোলঘেঁষা নয়নাভিরাম এ সমুদ্রসৈকতের একদিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। অপরদিকে সীমাহীন বঙ্গোপসাগর। দেশের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় জেলা বরগুনার প্রধান তিনটি নদী- পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বরের জলমোহনার সাগরে মিশে যাওয়ার স্নিগ্ধ বেলাভূমির বালুচর এই শুভসন্ধ্যা।
সৈকতটি তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়া এলাকায় অবস্থিত। তাই স্থানীয়দের কাছে এটি নলবুনিয়াচর নামেই বেশি পরিচিত। প্রায় ১০ কিলোমিটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে চরের বনাঞ্চল। ২০০৬ সালে ৫৮ হেক্টর জমিতে এখানে নন-ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল গড়ে তোলে বন বিভাগ। ঝাউ, আকাশমণি, অর্জুন, খইয়্যা বাবলা, মাউন্ট, কালি বাবলা, কড়ই, খয়ের ও বাদামসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে এখানে।
বিস্তীর্ণ বেলাভূমির এই বনাঞ্চলের সাগরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। এখানে গোধূলি-সন্ধ্যা অপরূপ রূপে সাজে। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই পেশায় জেলে। শীত এলে হাজার হাজার জেলের সমাগম ঘটে। সকাল-সন্ধ্যা তারা শুঁটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন। বর্ষাকালে উন্মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা সারি সারি ঝাউগাছের মাথার ওপর ওঠা রঙধনু নয়ন জুড়িয়ে দেয়।
পর্যটকরা সাধারণত নৌ ও স্থলপথেই এখানে আসেন। পিকনিক স্পটে সুন্দর ও মনোরম পরিবেশের পাশাপাশি রান্নার সুব্যবস্থা থাকায় পর্যটকদের তেমন একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না। বড় বড় হোটেল, রেস্তোরাঁ এখনও গড়ে ওঠেনি। তবে রয়েছে ছোট ছোট চায়ের দোকান।
ঢাকা থেকে বিকাল ৫টায় বরগুনার উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে যায়। এ ছাড়া গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকেও বাসে করে যাওয়া যায়। সকাল ৮টার মধ্যে এসব লঞ্চ বরগুনা পৌঁছায়। আর পদ্মা সেতু হয়ে বাসে লাগবে মাত্র ৬ ঘণ্টা। বরগুনা পৌঁছেই হোটেল নেওয়ার দরকার নেই। তালতলীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া যানবাহন ও ট্রলারে প্রথমে তালতলী সদরে যেতে হবে। সেখানে আবাসিক হোটেল, ডাকবাংলো, এনজিও রেস্টহাউস রয়েছে। থাকা যাবে স্বল্প খরচে।
প্রথমেই পর্যটকদের নজর কাড়বে নদী ও সাগরের তাজা মাছ। এসব মাছ না খেলে ভ্রমণের অর্ধেকই বৃথা। একটু বিশ্রাম নিয়ে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়া যাওয়ার জন্য ভ্যান, রিকশা বা মোটরসাইকেলে সোজা চলে যাওয়া যাবে। এরপর আর যানবাহনের দরকার হবে না। দুই-তিন মিনিট সারি সারি ঝাউগাছ পেরিয়ে মেঠো পথ হেঁটে দেখা মিলবে কাঙ্ক্ষিত ‘শুভসন্ধ্যা’ সৈকত।