× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বরফে ঢাকা কাশ্মির

রাশেদুল হাসান

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩ ১৬:৩৭ পিএম

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩ ১৮:৩৫ পিএম

বরফে ঢাকা কাশ্মির
বরফে ঢাকা কাশ্মির

কাশ্মির বলতে আমরা ভারতের অংশে অবস্থিত জম্মু-কাশ্মিরকেই বুঝি। স্থানীয়দের কাছে কাশ্মির মানে পানি থেকে উদ্ভূত ভূমি। আর সাধারণ জ্ঞান বই পড়ুয়া আমরা জেনে এসেছি কাশ্মিরকে ভূস্বর্গ বলা হয়। খুব ভুল কি বলা হয়? এ প্রশ্নের উত্তর কাশ্মির ভ্রমণ করলেই পাওয়া যাবে নিঃসন্দেহে।

কাশ্মিরে বছরজুড়েই ভ্রমণ করা যায়। আমাদের তিন বন্ধুর কাশ্মির ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল আমরা তুষারপাত দেখব। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই চার মাস কাশ্মিরে শীতকাল এবং এই সময়েই তুষারপাতের দেখা মেলে। সে হিসেব কষেই ভিসার আবেদন করে, ভিসা পাওয়ার পর ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ সাড়ে এগারোটায় ঢাকা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশে গ্রিন লাইন বাসে চেপে বসি। জনপ্রতি ভাড়া ছিল ১০০০ টাকা। 

বাসে উঠতেই চোখে ঘুম চলে আসল। ঘুম ভাঙার পর জানতে পারলাম আমরা বেনাপোল বর্ডারে চলে এসেছি। ইমিগ্রেশন খুলবে সকাল সাড়ে ৬টায়। বন্দরের পাশেই সোনালী ব্যাংকে প্রত্যেকের জন্য ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা ও পোর্ট ফি ৫০ টাকা জমা দিলাম। এরপর ইমিগ্রেশনের লম্বা লাইনে দাঁড়ালাম। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পার হতে হতে দুই ঘণ্টা লেগে গেল। একই ভাবে ভারতের ইমিগ্রেশন পার হতে সময় লাগল দুই ঘণ্টা। ভারতে প্রবেশ করেই হোটেলে সকালের নাশতা যখন শেষ করি, তখন ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ১১টা। 

এবার কলকাতা যাবার পালা। কলকাতা বাসে যেতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা, ভাড়া জনপ্রতি ৪০০ রুপি। অথচ ট্রেনে গেলে সময় এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হয়। একটু সামনে এগিয়ে অটো নিয়ে আমরা চলে গেলাম বনগাঁও রেলস্টেশনে। ২০ রুপিতে শেয়ালদাহ এর টিকিট কেটে ট্রেনে চেপে বসলাম। দুই ঘণ্টা পর আমরা শেয়ালদাহ রেলস্টেশনে এসে নামলাম। স্টেশন থেকে বের হয়েই লোকাল বাসে ১২ রুপি খরচ করে চলে আসলাম কলকাতা নিউমার্কেটে। ততক্ষণে ঘড়িতে সময় বিকাল ৩টা। খাওয়ার পর্ব শেষ করেই নিউ মার্কেট ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। হাতে লম্বা সময়, কারণ কলকাতার হাওড়া রেলস্টেশন থেকে জম্মুর তাওই স্টেশনগামী আমাদের ট্রেনের সময় ছিল রাত ১২টা। এদিক ওদিক ঘুরাফেরা শেষে রাত ৮টায় রাতের খাবার শেষ করেই আমরা চলে এলাম হাওড়া রেলস্টেশনে।

রেল স্টেশনের দ্বিতীয় তলায় পেয়ে গেলাম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পেইড ওয়েটিং রুমের, প্রতি আসনের ভাড়া প্রতি ঘণ্টায় জনপ্রতি মাত্র ১০ রুপি। হাওড়া থেকে জম্মুর তাওই পর্যন্ত যে ট্রেনে যাবে সেই ট্রেনের নাম হিমগিরি এক্সপ্রেস। প্রায় ৯০টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে জম্মুর তাওই স্টেশনে আমরা পৌঁছই ৪৪ ঘণ্টা পর! সন্ধ্যার পর আশপাশেই একটু ঘোরাফেরা করে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। এরপর তাওই থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত জনপ্রতি ১১০০ রুপি দিয়ে শেয়ারিং ট্যাক্সি ঠিক করে নিলাম। শ্রীনগর পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় ভোর হয়ে গেল। আগে থেকেই বুকিং দেওয়া হোটেলে উঠে একটু রেস্ট নিয়েই বের হয়ে গেলাম। এবার আমাদের যাত্রা গুলমার্গের উদ্দেশে। এখান থেকে ট্যাক্সি নিলাম ৩০০০ রুপি দিয়ে। 

গুলমার্গ যাওয়ার পথে তাংমার্গ নামক একটা জায়গা পড়ে। গুলমার্গের টেম্পারেচার তখন -৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাংমার্গ থেকে ৫০০ রুপিতে থার্মাল স্যুট আর বোটভাড়া করে নিলাম। শ্রীনগর থেকে বরফে ঢাকা ভয়ঙ্কর রাস্তায় কয়েকবার বাহন বদলে যখন গুলমার্গ এসে নামি, তখন চোখের সামনে শুভ্র এক স্নিগ্ধতা। শীতে কাঁপতে কাঁপতে তুষারপাত দেখছি। তুষার জমে পুরু হয়ে আছে পথঘাট। পা ডেবে যাচ্ছে। জীবনে প্রথমবারের মতো তুষারপাত দেখার অভিজ্ঞতা অন্যরকম। যেদিকে চোখ যায় শুধু স্নিগ্ধ, চোখ ধাঁধানো শুভ্রতা। এবারের মতো তুষারপাত নাকি অনেক বছর পর হয়েছে।

ভারী শীতের কাপড় পরেও শীত মানছে না। চোখের পাঁপড়িতে তুষার জমে যাচ্ছিল বারবার। ঠিক বৃষ্টির মতই তুষারপাত হচ্ছিল। সে এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। মনে হচ্ছিল পৃথিবীর বাইরে অন্য এক সুন্দর পৃথিবী, যে পৃথিবীতে কোনো কালিমা নেই দাগ নেই। অতিরিক্ত ঠান্ডায় বেশিক্ষণ থাকা গেল না, দুই ঘণ্টা পরেই আমরা শ্রীনগরের উদ্দেশে রওনা হলাম। হোটেলে পৌঁছয় সন্ধ্যা ৭টায়। সারা দিন যথেষ্ট ধকল যাওয়াতে রাতের খাবার খেয়েই দ্রুত শুয়ে পড়লাম। 

পরদিন আমাদের গন্তব্য শ্রীনগরের ডাল লেক। ডাল লেক গ্রীষ্মকালেই বেশি জমজমাট থাকে। প্রায় ২৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চারটি ভাগে ডাল লেক বিস্তৃৃৃত। ডাল লেক হাউসবোট ও শিকারের জন্য খুব জনপ্রিয়। এ ছাড়া কায়াকিং ও ক্যানোয়িংসহ নানা বিনোদনের সুযোগ এখানে আছে। আমরা ডাল লেকে গিয়ে দেখি এর দুপাড়ে বরফ জমাট বেঁধে আছে। লেকের মাঝ বরাবর পানি জমাট বাঁধেনি। প্রচুর পর্যটক নৌকায় করে ঘুরে বেড়াচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ডাল লেকে। পাশেই বরফে ঢাকা পাহাড় সারি। এর চেয়ে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য কাশ্মিরের ডাল লেকে না এলে বোঝা যাবে না। শীতকালে কাশ্মির অন্য এক রূপ নিয়ে ধরা পড়ে লক্ষ লক্ষ ভ্রমণপিপাসু মানুষের চোখে মুখে। বিকালে শ্রীনগরের আশপাশ ঘুরেফিরে হোটেল রুমে চলে আসলাম।  

সকালে ঘুম থেকে ওঠে নাস্তা সেরেই জম্মুর তাওই এর উদ্দেশে রওনা হলাম। ঘণ্টা খানিক পরেই আমাদের ট্যাক্সি থেমে গেল। জানতে পারলাম প্রচুর বরফ জমে রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে। রাস্তা পরিষ্কার করতে করতে প্রায় চার ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। তাওই রেলস্টেশনে এসে কলকাতার ট্রেনের টিকিট কাটলাম। ট্রেন ছাড়ার সময় পরদিন সকাল ৭টা। আর এবার যে ট্রেন তাওই থেকে কলকাতা যাবে, সে ট্রেনের হামসাফার এক্সপ্রেস। হাওড়ার মতো পেইড ওয়েটিং রুম পেলাম না, তাই চেয়ারে বসেই রাতপার করলাম। হামসাফার এক্সপ্রেসে কলকাতায় আমরা পৌঁছয় প্রায় ৩৩ ঘণ্টা পর। কলকাতা নেমেই হোটেল বুক করে পরদিন সকালে বাংলাদেশে যাওয়ার টিকিটও কেটে ফেললাম। 

পরদিন ভোর ৪টায় যথারীতি নিউমার্কেট থেকে বেনাপোল বর্ডার এর উদ্দেশে বাস ছেড়ে দিল। তবে এবার বর্ডার ক্রস করতে দুইটি ইমিগ্রেশন মিলে ঘণ্টা খানেকের মতো সময় লাগল, যা কিনা ভারতে যাওয়ার সময় ৪ ঘণ্টা লেগেছিল। বর্ডার পার হয়ে ঢাকা পৌঁছতে পৌঁছুতে বিকাল ৫টা বেজে গেল। একটা স্মরণীয় ও মনোমুগ্ধকর ভ্রমণের ছবি চোখে নিয়ে বাস থেকে নামলাম। আবার হয়তো কোনো এক বসন্তে, কিংবা বর্ষায় অথবা গ্রীষ্মে কাশ্মির ভ্রমণের সংকল্প মনে গেঁথে নিলাম। কারণ স্বর্গে ভ্রমণের কোনো সময়সীমা নেই। যখনই স্বর্গে যাব তখনই স্বর্গের রূপ আমাদের চোখে একেকসময়ে একেকভাবে ধরা পড়বে।   

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা