× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রকেট্রি ইনোভেশন চ্যালেঞ্জজয়ী

রকেটম্যান নাহিয়ান

তানভীর তানিম

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:৪১ পিএম

আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:৪৯ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

রকেট্রি ইনোভেশন চ্যালেঞ্জে প্রজেক্ট ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় টিম ধূমকেতুএক্স

রকেট্রি ইনোভেশন চ্যালেঞ্জে প্রজেক্ট ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় টিম ধূমকেতুএক্স

গত ১৮ জানুয়ারি পর্দা নামল রকেট্রি ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০২২-এর। সারা দেশ থেকে ১২৪টি দল এতে অংশ নেয়। অনন্য উদ্যোগ ও উচ্চতর ক্ষমতাসম্পন্ন রকেটের ধারণা উপস্থাপন করে প্রজেক্ট ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় টিম ধূমকেতুএক্স। এই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাহিয়ান আল রহমান ওলি। তার কাছ থেকে তার রকেটম্যান হওয়ার গল্প শুনেছেন তানভীর তানিম 

শুরুর গল্প

ছোটবেলায় টেলিভিশন দেখতে পছন্দ করতেন নাহিয়ান। সেই টেলিভিশনে দেখা রকেট উড্ডয়নের দৃশ্য আন্দোলিত করে তার ছোট্ট মনকে। স্বপ্ন দেখেন তিনিও একদিন রকেট তৈরি করে রকেট উড্ডয়ন করবেন। ফলস্বরূপ, পরবর্তী সময়ে একাধিক উদ্যোগের উদ্যোক্তা নাহিয়ান। 

একের পর এক ব্যর্থতা 

২০১২ সালের দিকে নাহিয়ান ভর্তি হন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। স্কুল, কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে পা রাখলেও সদা আবিষ্কারের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা চঞ্চল মন আগের মতোই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এবার চিন্তা করলেন, ব্যতিক্রম কিছু তৈরি করে মানুষকে তাক লাগিয়ে দেবেন। যেই ভাবা সেই কাজ! ক্যাম্পাসের এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করলেন রকেট তৈরির কাজ। কিন্তু পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা, অর্থ ও নির্মাণসামগ্রীর অভাব কিছুদিনের মধ্যে থামিয়ে দিল নাহিয়ানকে। এর দুই বছর পর সময়-সুযোগ বুঝে নাহিয়ান আবারও নামেন তার অধরা স্বপ্নের খোঁজে। এবার পুরোপুরি সফল না হলেও ব্যর্থ হননি। প্রায় ৩০০ ফুট রকেট ওড়াতে সক্ষম হন। এরপর কেটে গেছে আরও তিনটি বছর। ততদিনে স্নাতক শেষ হয়েছে। ২০১৭ সালের শেষদিকে আবারও চেষ্টা করলেন। তবে অন্যবারের তুলনায় এবারে নাহিয়ান যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও দক্ষ। এর ফলও তিনি পেলেন। চার বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ২০২২ সালে এসে তৈরি হলো সেই কাঙ্ক্ষিত রকেট।

লোন ও টিউশনের টাকাই সম্বল

নির্মাণসামগ্রীর অভাব নাহিয়ানের কাজকে যতটা না কঠিন করেছে, তার চেয়ে বেশি বেগ পেতে হয়েছে অর্থসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। শুরু থেকেই অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে নাকানিচুবানি খেতে হয়েছে নাহিয়ান ও তার দলকে। উপায়ান্তর না পেয়ে, শেষ পর্যন্ত একটি ব্যাংক থেকে লোন নেন নাহিয়ান। এ ছাড়া, এর পেছনে নিজের টিউশনির টাকাও ব্যয় করেছেন তিনি। 

টিম ধূমকেতুএক্স

২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নাহিয়ান একাই কাজ করতেন। পরে একটি দল তৈরির প্রয়োজন তিনি অনুভব করেন। ২০১৮- তে সমমনা কিছু তরুণ যুক্ত হয় তার সঙ্গে। গড়ে ওঠে ১৫ সদস্যের দল ধূমকেতুএক্স। এদের মধ্য থেকে ৯-১০ জন এই প্রকল্পে সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সাইদুর রহমান, নাদিম আহমেদ, লিয়ান মল্লিক, শাহরুখ খান, আদিল আরহাম, আবরার ফয়সাল, ফজলে রাব্বি, জান্নাতুল নাইম ও আশরাফ মিয়া।

রকেটগুলোর বৈশিষ্ট্য

নাহিয়ান দাবি করেছেন, তার তৈরি রকেটগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে তৈরি প্রথম ওয়েদার রিসার্চ রকেট (সাউন্ডিং রকেট)। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত পত্রিকা ধূমকেতুর সঙ্গে মিলিয়ে রকেটগুলোর নাম রাখা হয়েছে ধূমকেতু। মোট চারটি রকেট তৈরি হয়েছে এ নামে। ধূমকেতু-০.১, ধূমকেতু-০.২, ধূমকেতু-০.৩ এবং ধূমকেতু-০.৪। ধূমকেতু-০.১ ও ধূমকেতু-০.২ লম্বায় ৭ ফুট, আয়তনে ৩.৫ ইঞ্চি। অন্যদিকে ধূমকেতু-০.৩ ও ধূমকেতু-০৪-এর উচ্চতা ও আয়তন যথাক্রমে ১০ ফুট ও ১২ ফুট এবং আয়তন ৪.৫ ও ৬ ইঞ্চি। আকাশে উড্ডয়ন করার পর আবহাওয়া সংক্রান্ত গবেষণার কাজে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে এসব রকেট।

নানা প্রতিকূলতা

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রকেট উড্ডয়নের কথা চিন্তা করাটা যেন পাগলের প্রলাপ বকার শামিল। সরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ অতীতে দৃশ্যমান হয়নি। তাই পৃষ্ঠপোষকতা করার ঝুঁকি নিতে চায়নি কেউ। তখন কঠিন কাজটা আরও কঠিন হয়ে যায় নাহিয়ানের জন্য। এরপর রকেট যখন তৈরি হলো, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাচ্ছিলেন না। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় সে সময় সবকিছু ছেড়েছুড়ে চলে যান টিম মেম্বারদের কেউ কেউ। কিন্তু নাহিয়ান শেষটা দেখতে চেয়েছিলেন, যার ফলও পেলেন তিনি রকেট্রি ইনোভেশন চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে। 

রকেট্রি ইনোভেশন চ্যালেঞ্জজয়ী রকেটম্যান নাহিয়ান

রকেট্রি ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ

এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমআরএএইউ) যৌথ উদ্যোগে রকেট্রি ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০২২ শুরু হয় গত ৩ অক্টোবর থেকে। নাহিয়ানের দল ধূমকেতুএক্স সেখানে অংশ নেয় এবং ১২৩টি দলকে পিছনে ফেলে প্রস্তাবনাটি চুড়ান্ত ভাবে বিজয়ী হয়।

রকেট্রি ইনোভেশন চ্যালেঞ্জজয়ী নাহিয়ানের নাম ঘোষণাকালে তাকে ইলন মাস্কের সঙ্গে তুলনা করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় নাহিয়ানকে পুরস্কার সম্মাননা প্রদান করেন তিনি।ধূমকেতুএক্স প্রজেক্ট ক্যাটাগরিতে এ সম্মাননা লাভ করে। এ জন্য ৫২ কিলোমিটার উড্ডয়নশীল রকেটের ডিজাইন, আইডিয়া, গবেষণাপত্র ও কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করতে হয়। সেগুলো বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষণ-নিরীক্ষণ শেষে কয়েকটি ধাপে তাকে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়। সেখানে সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়ে প্রস্তাবনাটি চুড়ান্ত ভাবে বিজয়ী হয়, সম্মাননা হিসেবে পান ৫০ লাখ টাকা ও সার্টিফিকেট। 

উদ্ভাবক নাহিয়ান

নাহিয়ান যে রকেটের জন্য বিজয়ী হয়েছেন, সেটির নাম বায়ান্ন। এটি উন্নত দ্বি-পর্যায়ের প্রোটোটাইপ রকেট। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ব্যবহার করে বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে অধিক তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম এই রকেট। এটি বায়ুমণ্ডলের অন্তত ৫২+ কিমি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

নাহিয়ান আল রহমান অলি

নাহিয়ান বলেন, একপর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। রকেট তৈরির পরও কোনো জায়গা থেকে সাপোর্ট পাচ্ছিলাম না। এদিকে ২০১৬ সালে আমার পড়ালেখা শেষ হয়েছে, পুরোটা সময় বেকার। এই পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এতে অনেক মানুষের অবদান রয়েছে। বিশেষ করে আমার মা-বাবার। এ ছাড়া জয় (সজীব ওয়াজেদ জয়) ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ওনার নেতৃত্বে এ আয়োজনটি সম্পন্ন হয়েছে

‘বায়ান্ন’ বায়ুমণ্ডলের যেসব উপাদান পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম :

  •      আবহাওয়া সংক্রান্ত কণা
  •      মাইক্রোগ্রাভিটি পরীক্ষা (ওজোন স্তর)
  •      ন্যানো স্যাটেলাইট পরীক্ষা
  •      সামরিক উদ্দেশ্যসাধন 
  •      পর্যায় বিচ্ছেদ পরীক্ষা

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা